বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ভেটেরিনারি ডাক্তারদের একদিন

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পশু ডাক্তারদের একদিন
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পশু ডাক্তারদের একদিন  © টিডিসি ফটো

সবাই ইন্টার্ন ডাক্তার। যাদের লড়াই বোবাপ্রাণীদের সুখ-দুঃখ আর বেঁচে থাকার অন্তরালে। বুঝার বাকি নেই, তারা ভেটেরিনারিয়ান। বংশী নদীর তীরে ৩২ একরের ক্যাম্পাসে তাদের পথচলা। বলছি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ব্যাচের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থীদের কথা।

দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের পথ অতিক্রম করে কেবল শুরু হলো ইন্টার্নের প্রথম সপ্তাহ। সবার মধ্যেই তার আমেজ বইছিল। সে আমাজে নিয়ে গেল অন্য এক ভাবের রাজ্যে। নিজেদের জীবনবাজি রাখা যাদের নিমিত্তে তাঁদের সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতেও তো মন চায়। এরই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা হলো গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারিপার্ক ঘুরে দেখার। সেই মোতাবেক সবাই এক বাক্যে রাজী হয়ে গেল। 

পরদিনই সবার সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দিনটি জুলাইয়ের ১ তারিখ। ক্যাম্পাসের সন্নিকটেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ। অনন্য এই নির্দশন যে জায়গাটায় তার নাম নবীননগর। এখান থেকেই যাত্রা শুরু হবে। তাই, একে একে ১৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত। ২৪ জনের এ দলে বাকি ৬ জনের অসুবিধা থাকায় আর যোগ দিতে পারলো না। স্থানীয় হোটেলে সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম।

এরপর এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া। গাড়িতে যতগুলো আসন রয়েছে তার অর্ধেক অন্য যাত্রী বাকি অর্ধেক শুধুই আমাদের। এভাবে আর কখনো যাওয়া হয়নি।  তাই অন্যরকম এক অনুভূতি তৈরী হলো। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম আমাদের আড্ডা-দুষ্টামিগুলো অন্য যাত্রীরাও উপভোগ করছে। চলতে চলতে কখন যে গাজীপুর চৌরাস্তা এসে পড়লাম টেরই পেলাম না। অন্য সময় এ দূরত্ব পাড়ি দিতে কি যে কষ্ট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এরপর গাড়ি পরিবর্তনের পালা। এবারের গন্তব্য গাজীপুরের ভবানীপুর। উঠে পড়লাম  জামালপুর-ময়মনসিংহগামী একটি বাসে। গন্তব্য স্থানে নামতেই তুমুল বৃষ্টি। এ যেন রসানের জটিল সৌন্দর্য। ভ্রমণ, আনন্দ, উপভোগের অপেক্ষা আর বৃষ্টির শিহরণ মিলেমিশে একাকার। তার সঙ্গে বৃহস্পতি তুঙ্গে তুললাম এক কাপ গরম চায়ের কাপে। টং দোকানের চায়ের কাপে টুংটাং, বৃষ্টির টুপটাপ আর আমাদের শিহরিত উচ্ছ্বাসে সময় যেন পিছিয়ে গেল আরো ১০০ বছর। 

কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামল। ভেজা পাকা রাস্তায় নিজেদের পা আর পথের মসৃণতায় এগোতো থাকলাম মহেন্দ্রক্ষণে। না, হেঁটে নয় এখান থেকে অটো নিতে হবে। ১০ মিনিটের রাস্তা নিজেদের করে নিলাম। পৌঁছে গেলাম ৪৯০৯ একর বিশাল শালবন বেষ্টিত এক প্রাণীর রাজ্যে। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় এবং শিক্ষার্থী হওয়ার নির্ধারিত প্রবেশমূল্য থেকে কম দিয়েই ঢুকতে পারায় আনন্দকে সাথে নিয়ে ঢুকে গেলাম অন্য এক স্বর্গরাজ্যে। প্রাণী সেবায় নিয়োজিতদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত ছিল যেন ওই রাজ্যের প্রাণগুলোও। তাই তো, বিচিত্র ধরনের বিচিত্র সৌন্দর্যের মুখোমুখি হতে দেরি হলো না।

জিরাফ, বানর, ৪ প্রজাতির হরিণ (সাম্বার, মায়া, চিত্রা, প্যারা), এশিয়ান এবং আফ্রিকান হাতি, গয়াল, বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই, জেব্রা, বাঘ, সিংহ, সারস, মিঠা ও লোনা পানির কুমির, ভাল্লুক, কচ্ছপ, জলহস্তি, নানা প্রজাতির পাখি, ময়ূরের অপুরান ভান্ডার যেন নিয়ে যায় অজানা জগতে।

তার সঙ্গে বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী ফলজ, ফডার, ও মিশ্র প্রজাতির বাগান, মিউজিয়াম ইত্যাদি যেন পৃথিবীর সকল উপভোগকেও হার মানায়। কোর সাফারী পার্কে প্রবেশের পর যে দৃশ্যের অবলোকন হয়েছে তা নিজেদের উপভোগের মাত্রা আর অভিজ্ঞতাকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করেছে। নিরাপত্তা বেষ্টিত সাফারি গাড়িতে বসে খুব কাছ থেকেই বাঘ এবং সিংহের সাক্ষাৎ হতে পেরেছি। প্রাণীদের এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ সত্যই অভূতপূর্ব।

এসব বিষয়ে উচ্ছ্বসিত শেখ তাজ উদ্দিন আহমেদ বলে উঠেন, শালবন ঘেরা গাজীপুর এমনিতেও অনিন্দ্য সুন্দর। তারপর সাফারিপার্কের এক রোমাঞ্চকর সময়। আমার গ্রামের বাড়ি খুলনায়। সুন্দরবন এলাকার মানুষ হওয়ায় বন্যপ্রাণীর সঙ্গে ভালোই সখত্যা। তারপরও এই সাফারিপার্ক এমন এক অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে যা সত্যিই অসাধারণ। এত কাছ থেকে এত স্পষ্ট এদের বিচরণ এখানে না আসলে কখনোই স্পর্শ করতে পারতাম না। 

এর আগে যাত্রাপথে যে অনুভূতি হলো সেটাও ছিল জীবনের সেরা সময়। মেঘাছন্ন পথ পাড়ী দিয়ে ঐখানে যাওয়ার মজাও ছিল অন্যরকম। এরপর চায়ের দোকানে সবাই যখন বৃষ্টি উপভোগ করছিল আমি ভিজতে চলে আসলাম। উপভোগের মাত্রা যেন বেড়ে গেল। ওখান থেকে যখন ফেরার সময় হলো তখন মনে হলো রোবটিক জগতে ফেরত যাচ্ছি। প্রকৃতি আমাদের অনেক কিছুই দেয় যেটা আমরা উপলব্ধি করি না। তাই প্রকৃতিকে বাঁচাতে সবার সচেতন হওয়া উচিত।

তার সঙ্গে কিছু যোগ করে ইমদাদুল হক সুমিম বলেন, প্রকৃতির কাছে যে যত বেশি যাবে সে তত নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। এতো এতো প্রাণবৈচিত্রের সম্ভার দেখেছি যা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি৷ যেমন উপভোগ করেছি তেমন অনেক শিক্ষালাভও হয়েছে। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকে তাদের মতো সৌভাগ্যবান আর কেউ নাই।

এতো এতো রোমাঞ্চ আর উপভোগের মাঝে সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। দেখতে দেখতে কখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো বুঝাই গেল না। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বেই বিদায় ঘন্টা বেজে উঠলো। উত্তাল মন যেতে না চাইলেও সময় আর বাস্তবতায় হার মানতে হলো। অভূতপূর্ব কিছু অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাকে সাক্ষী করে ক্লান্ত শরীর বাসে এলিয়ে ফিরতে শুরু করলো সবাই। এতে করে কালের গহ্বরে আর একটা দিন হারিয়ে গেল ঠিকই তবে সেটা অন্য সাধারণ দিনের মতো ছিল না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence