‘চালন্দা গিরিপথে’ একবার হলেও ঘুরতে যান চবি শিক্ষার্থীরা
- জানে আলম
- প্রকাশ: ২৯ মে ২০২২, ০৬:৪৯ PM , আপডেট: ২৯ মে ২০২২, ০৭:০৬ PM
প্রকৃতির কন্যা বললেই যে ক্যাম্পাসের নাম ভেসে উঠে ক্যানভাসে তা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু গাছ-পালা, ফুল-ফল এবং পাখিই না, পাহাড়ে ঘেরা রাস্তা, ঝর্ণা, লেক এমনকি গিরিপথ- কি নেই এই ক্যাম্পাসে! প্রকৃতি যেন তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছে এই ক্যাম্পাসকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের চালন্দা গিরিপথে যেন ষোলকলা পূর্ণ করে দিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এ গিরিপথে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে মাথার উপর পড়ছে রোদ। পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে শীতল পানি, যা বয়ে চলছে ছড়া দিয়ে। ছড়ার পানি দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মাঝে মাঝে কোমর পানিতে যখন ডুবে যায়, তখন মনে হয় এই বুঝি পা পড়লো সাপের গায়ে।
কাঠুরিয়া কাঠ বয়ে নেমে আসছে। ছড়ার দু’পাশেই পাহাড়ের গায়ে হরেকরকমের আবাদ করে রেখেছে কৃষক। কলা অনুষদের ঝুপড়ির পেছনে পথ ধরে সেই ছুটে চলা শেষ হয় না। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর ছড়ার বামে একটি সরু রাস্তা, যা দেখলেই শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। তবে ভুল করা যাবে না, ডানে গেলে পথ চলতে হবে সীতাকুণ্ডের পথে।
আরও পড়ুন: ভ্রমণ পিয়াসু
গাঁ চমকে উঠবে না কেন? হঠাৎই শরীরটা হিমশীতল হয়ে উঠে। স্বচ্ছ পানির স্রোতের সাথে শীতল বাতাস ধোলা দেয় মনে। দু’টি পাহাড়ের মধ্যে এতই সরু পথ যে, মাঝে মাঝে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
শেওলা ধরা দুই পাহাড়ের গায়ে হাত-পা দিয়ে ক্রমেই এগিয়ে যেতে হয়। দুই পাহাড়ের উপরের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোকছটা যখন উঁকি দেয় তখনই কেবল মনটা ভরে উঠে। পাহাড়ের গায়ে যেন কারুকাজ করা তবে যত্নের অভাবে শেওলা ধরে আছে। নির্জন হলেও নিজেকে একাকি মনে হয়না কারণ পাখির কিচিরমিচির শুনলে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে।
প্রায় আধা কিলোমিটারের এই গিরিপথে ক্রমেই বাড়তে থাকে ঝুঁকির প্রবণতা। একটু ভেতরে গেলেই পানি কোমরে উঠে যায়, শীতল এই পানি পাহাড়ের আলিঙ্গন ভেবে ধরে নেওয়া গেলে ভালো লাগতে পারে। তবে, সামান্য অসাবধানতায় পাথরে আঘাত পাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা আছে। দুই পাহাড়ে হাত-পা দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা দুঃসাধ্য মনে হতে পারে। তবে থেমে না গিয়ে সতর্কতার সাথে পথ চলতে হবে।
দুর্গম এই গিরিপথ ২০১১ সালে আবিষ্কৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু দুঃসাহসী শিক্ষার্থী জানতে পারে প্রকৃতির এই বিস্ময় সম্পর্কে। ১১ জন বন্ধু মিলে ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিল রেখে এই গিরিপথের নাম দেন ‘চালন্দা গিরিপথ’। সেই থেকে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেলে দলবেঁধে ছুটে যান চালন্দা গিরিপথে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী একবার হলেও ঘুরে আসেন এই গিরিপথ। স্মৃতির পাতায় যুক্ত হয় এক অনন্য অনুভূতি।