বিদেশে উচ্চশিক্ষা

প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্টস কোথায় কিভাবে সত্যায়ন করবেন

সত্যায়ন
সত্যায়ন   © প্রতিকী ছবি

বিদেশে পাড়ি জমাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে জমা দিতে হয় বিভিন্ন একাডেমিক ডকুমেন্টস। আর এই সকল ডকুমেন্টস হতে হবে অবশ্যই সত্যায়িত। অনেকেরই প্রশ্ন কি কি ডকুমেন্টস,কোথায় এবং কীভাবে সত্যায়িত করতে হবে। সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে নিচে। 

একাডেমিক ডকুমেন্টসগুলো সাধারণত শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সবশেষে উক্ত দেশের (যেমনঃ জার্মানি) এমব্যাসি/কনস্যুলেট থেকে সত্যায়ন করতে হয়। 

সাধারণত আপনি যে দেশে এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন, তার উপরে নির্ভর করবে আপনার ডকুমেন্টস সত্যায়নের প্রক্রিয়া এবং সত্যায়ন কীভাবে করবেন বা করতে হবে এই ব্যাপারে প্রতিটা ইউনিভার্সিটি এর ওয়েবসাইটে বিস্তারিত বলা থাকে।

আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থাকলে কীভাবে শুরু করবেন

একটা কথা মনে রাখবেন, কখনো অরিজিন্যাল ডকুমেন্ট কোথাও পাঠাবেন না। এটা কোথাও চায় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ফটোকপি করে সত্যায়িত করতে হয় সেই ফটোকপিকে।

স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়ন
আপনি ব্যাচেলর/মাস্টার্স এর সনদপত্র ও নম্বরপত্র আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার থেকে সত্যায়ন করবেন। উল্লেখ্যঃ কোন কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেটা সহকারি রেজিস্ট্রার/কন্ট্রোলার/সহকারি কন্ট্রোলার দিয়ে করালেও গ্রহণ করে। তাই, অবশ্যই আগে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও এডমিশন অফিসে মেইল করে জেনে নিবেন।

এডুকেশন বোর্ড থেকে সত্যায়ন
প্রথমেই আসি এডুকেশন বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট সত্যায়ন। বোর্ড শুধু আপনার SSC এবং HSC এর সার্টিফিকেট সত্যায়ন করে দিবে। সার্টিফিকেট ও মার্কশীট শিক্ষা বোর্ড থেকে সত্যায়িত করাতে কমপক্ষে ৩-৫ দিন সময় লাগবে। এই সময়ে অরিজিনাল সহ ৪ সেট ফটোকপি সাথে রাখবেন। এখানে ফি বাবদ ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হবে। ফি বাবদ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করবেন শিক্ষা বোর্ডের সোনালী ব্যাংক থেকে। তারপর বোর্ড থেকে একটি ফর্ম পূরণ করে টাকা জমার রিসিপ্ট সহ আপনার সকল ডকুমেন্টস জমা দিবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন
প্রথমে নিজ নিজ ইউনির্ভাসিটি থেকে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট এর কপি ভেরিফাই করা। উল্লেখ্য যে, প্রাইভেট এবং সরকারীর  নিয়ম ভিন্ন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্ষেত্রে এটা জানা জরুরী যে কোন কোন সিগ্নেটরির নাম এবং সিগ্নেচার Ministry of Education (MoEd) এ এনলিস্টেড। শুধুমাত্র এনলিস্টেড সিগ্নেটরি দিয়েই ভেরিফাই করাবেন, অন্যথায় MoEd এ ঝামেলা করে।

ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ সচিবালয়ে যেতে হবে। সচিবালয়ের গেট নং ০২, কাউন্টার নং ১০ ( যদি পল্টন মোড় থেকে আসতে থাকেন, তাহলে জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে ডানে যেতে হবে )। অরিজিনাল সহ ৩/৪ কপি ডকুমেন্টস সাথে নিয়ে যাবেন। এখানে কাগজ-পত্র সকাল ১১ টা থেকে জমা পড়া শুরু হয় আর বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলে ঐ দিনই বেলা ৩টা বা ৪টার মধ্যে ডকুমেন্টস ফেরত দেয়া শুরু হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন
কাগজপত্র আপনাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও জমা দিতে হতে পারে সত্যায়নের জন্য। পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাব মোড় চলে গেলে, প্রেসক্লাবের ঠিক বিপরীতে রাস্তার সাথেই পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসর্পোট এর ফটোকপি নিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন: রাশিয়ায় পড়তে যেতে লাগবে না আইইএলটিএস, ব্যাংক বিবরণী

তবে মনে রাখবেন, অনেক শিক্ষার্থী এই কাজের জন্য লাইনে দাঁড়ায়- তাই সকাল সকাল এসে লাইনে দাড়ানোই ভালো। ঐ দিনই দুপুর ৩.৩০ এর দিকে ফেরত দেয়া হয় সত্যায়িত কপি। বের হবার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন সিল, সিরিয়াল নং ও সাক্ষর ঠিকমতো আছে কিনা

এম্বেসী থেকে ডকুমেন্টস সত্যায়নের
এম্বেসী থেকে ডকুমেন্টস সত্যায়নের জন্য অবশ্যই আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই ডকুমেন্টস সত্যায়ন করিয়ে আনতে হবে। এরপর এম্বেসীতে জমা দিতে হবে- নোটারাইজড করে অনেক সময় জমা দিতে হতে পারে- কিন্তু সেটা নির্ভর করছে কর্তৃপক্ষের উপর। আর এই সময় ডকুমেন্টস এর অরিজিনাল কপি নিয়ে যেতে ভুলবেন না।

বাইরের দেশের এম্বেসী থেকে সত্যায়ন করতে আপনার সেই দেশে অবস্থিত বন্ধু বা আত্মীয়ের সাহাজ্য প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাধারণত ফি দিতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে আপনি সহজেই কাজ করতে পারবেন।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সত্যায়ন
আপনি আপনার নিজ থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের আবেদন করবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত হয়েই আসে। তারপরও যদি আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত না থাকে তবে তা করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য অনলাইনেই আবেদন করা যায় এবং বাসায় বসেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।

জন্ম নিবন্ধন/ বার্থ সার্টিফিকেট সত্যায়ন
আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন পত্র টি প্রথমে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিবেন ( যদি করা না থাকে )। তারপর সেটা নোটারি পাব্লিক করে আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করবেন।

নোটারি পাব্লিক
নোটারি করতে চাইলে একজন আইনজীবী লাগবে যিনি নোটারি করানোর যোগ্যতা রাখেন। এরপর তিনি প্রথমে আপনার মূল বা আসল সনদপত্র যাচাই করে দেখবেন। মূল সনদপত্র বলতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট, জন্ম সনদ, চারিত্রিক সনদ ইত্যাদি বোঝায়।

সতর্ক থাকতে হবে, রাজধানীতে নোটারি পাবলিকের নামে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। আদালতপাড়াসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘিরে গড়ে উঠেছে এ অবৈধ নোটারী বাণিজ্যের বিশাল বাজার। তাই খোঁজ খবর নিয়ে অথোরাইজড আইনজীবী দ্বারা নোটারি করতে হবে।বিশেষ ক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফটোকপি নোটারাইজড করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করতে হতে পারে।

সব কথার শেষ কথা আপনি কোন দেশ ও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার ডকুমেন্টস সত্যায়নের যাবতীয় বিষয়াদি। যে কোন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও এডমিশন অফিসে মেইল করে কোন কোন ডকুমেন্টস কোথায় সত্যায়ন করবেন সেটা বিস্তারিত জেনে নিবেন।


সর্বশেষ সংবাদ