মেডিকেল ভর্তি–ইচ্ছুকদের জন্য ৫ পরামর্শ
চিকিৎসা পেশা সকলের কাছেই একটি মহৎ পেশা। এই পেশায় গিয়ে মানবসেবার মতো মহৎ ব্রত পালন করার রয়েছে অবারিত সুযোগ। তাই অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে মেডিকেলে পড়তে, ডাক্তার হতে। একজন আগ্রহী শিক্ষার্থীকে প্রথমেই পার হতে হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি কেবল একটি পরীক্ষা নয়, যুদ্ধও বটে। সেজন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি আর কঠোর পরিশ্রম। আর যেহেতু সময়ও কম, প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে কীভাবে একজন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পাবে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিচ্ছেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় চতুর্থ হওয়া শেখ সাজিদ সোহাইল ধ্রুব-
আগামী শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার সরকারি মেডিকেলে এবার আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮০টি। আর মোট এক লাখ চার হাজার ৩৭৪ জন আবেদন করেছেন। সে হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে ১৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন।
১) বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। সকল বিষয়ের আলাদা পদ্ধতিতে ও পরিকল্পনা মাফিক প্রস্ততি নেওয়া প্রয়োজন।
জীববিজ্ঞান: ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসবে। তাই পাঠ্যবই খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। মানবদেহ সম্পর্কিত সকল অধ্যায়ের খুঁটিনাটি তথ্য থাকতে হবে নখদর্পণে। বইয়ের উল্লিখিত বিভিন্ন ছক, সংখ্যা, অণুজীব, উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস, বৈজ্ঞানিক নামসমূহ ভালোভাবে জানলেই জীববিজ্ঞানে ভাল নম্বর পাওয়া সম্ভব।
রসায়ন: রসায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মৌলের পারমাণবিক গঠন, মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম, অণু পরমাণুর গঠন ও বৈশিষ্ট্য, জৈব রসায়ন, তড়িৎ রসায়ন এসব অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে বেশি। রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় পত্রের পাঠ্য বইয়ের প্রথম ও শেষ অধ্যায় খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। বইয়ের অনুশীলনীতে দেওয়া প্রশ্নগুলোও সমাধান করা জরুরি, যেটা বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই করে না।
পদার্থবিজ্ঞান: তত্ত্বীয় জিনিসগুলো ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। বইয়ের বিভিন্ন ছক, সংখ্যা বারবার পড়ে মনে রাখতে হবে। বইয়ের অনুশীলনীতে দেওয়া প্রশ্ন ও গাণিতিক সমস্যাগুলো চর্চা রাখা প্রয়োজন। গাণিতিক সমস্যার জন্য বিগত ৮-১০ বছরের প্রশ্নের ধরন দেখলেই একটা ভালো আইডিয়া চলে আসবে। পাঠ্যবইয়ের ভেক্টর, বলবিদ্যা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, তড়িৎ চুম্বকীয় ধর্ম, তাপগতিবিদ্যার অধ্যায়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার সরকারি মেডিকেলে এবার আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮০টি। আর মোট এক লাখ চার হাজার ৩৭৪ জন আবেদন করেছেন। সে হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে ১৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন।
ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান: বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই দেখা যায় বাকি বিষয়সমূহ ভালোভাবে পড়লেও ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপারে অবহেলা প্রকাশ করে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের গুরুত্ব সমান। ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামার ও ভোকাবুলারি থেকে প্রশ্ন আসে বেশি। কাজেই বিভিন্ন প্রশ্নব্যাংক থেকে এগুলো প্রচুর পরিমাণে চর্চা করতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের বেলায় বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়াবলি, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন, নদ-নদী, প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসন এগুলো ভাল করে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রশ্নব্যাংকের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরের বিসিএস প্রশ্ন সমাধান করলেই টপিক সম্পর্কে ভাল আইডিয়া পাওয়া যায়।
ফলাফল ভাল করতে পরামর্শ
২) চর্চার কোনো বিকল্প নেই: ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে বেশি বেশি প্রশ্নব্যাংক সমাধান করে যাচাই করে নিতে হবে যে কোন জায়গায় অথবা কোন বিষয়ে দুর্বলতা। যত বেশি প্রশ্নব্যাংক সমাধান করা হবে, তত বেশি নিজের দুর্বলতা নিয়ে সচেতন হওয়া যাবে। এই জায়গায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী ভুল করে থাকে। ওরা ভাবে যে বেশি বেশি বই মুখস্থ করলেই পরীক্ষায় ঠিক উত্তরসমূহ দাগিয়ে আসা যাবে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই মুখস্থ করা একদিকে যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনি শ্রমসাধ্য। তাই এ সময়টাতে নিজের দুর্বলতা জানা বেশি জরুরি, আর তা জানার উত্তম পন্থা হলো প্রশ্নব্যাংক সমাধান।
৩) প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে: বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই যা ভাবে, তা হলো এইচএসসি পরীক্ষায় যেহেতু ভালো করেছি, ভর্তি পরীক্ষা কয়েকদিন পড়লেই ভালো মেডিকেলে চান্স পেয়ে যাবে। এজন্য বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী পুরো অ্যাডমিশন সময়টা অবহেলায় কাটিয়ে বেড়ায়, গা ছাড়া একটা ভাব নিয়ে চলে। এই মনোভাবটাই ওদের ক্ষতির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়টা প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে প্রশ্নব্যাংক সমাধান করে নিজের দুর্বল দিকগুলো জেনে ওই টপিক বা বিষয় বেশি বেশি অধ্যয়ন করা দরকার।নিজের প্রয়োজনেই অসামাজিক হয়ে যেতে হবে। সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকতে হবে। মনোযোগ বিঘ্নিত করে এমন কোন কিছুই হাতের কাছে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে বাটন ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, ভাল কিছু অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।
৪) স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে: শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না, নিজের শরীরকেও গড়ে তুলতে হবে পরিশ্রমের উপযোগী করে। নিয়মিত ৬-৭ ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুম অনেক জরুরি। তার সাথে পরিমিত খাওয়া-দাওয়া এবং প্রচুর শাকসবজি ও পানি পান করতে হবে। বাইরের জাংক ফুড যত কম গ্রহণ করা যায় ততই মঙ্গল।
৫) অভিভাবকদের দায়িত্ব: ভর্তি পরীক্ষার সময় একজন শিক্ষার্থীকে খুব চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এ কারণে অন্যান্য সময় থেকে এই সময়ে অভিভাবকদের দায়িত্ব একটু বেশি। অভিভাবকদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে তাদের সন্তান এই সময় ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে কিনা। বাবা-মায়ের উচিত সন্তানকে ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেওয়া, চাপ দেওয়া নয়। চাপ দিলে ভালোর পরিবর্তে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। সন্তান যাতে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে অভিভাবককে আশ্রয় হিসেবে পায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার