মায়ের স্বপ্ন, স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় প্রশাসন ক্যাডারে ৪র্থ আরিফ

মো. আরিফ হোসাঈন
মো. আরিফ হোসাঈন  © টিডিসি ফটো

৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আরিফ হোসাঈন। তিনি জানিয়েছেন, তার এমন অর্জনে তার মা পারুল বেগমের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি এখন দেশ ও জাতির সেবা করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। স্বপ্নটা মায়ের হলেও তার স্ত্রীর অবদান কোনো অংশেই কম ছিল না। মায়ের পাশাপাশি আরিফের এমন সাফল্যের পেছনে বড় অনুপ্রেরণা ছিল তার স্ত্রী আসমা উল হুসনা মাশাবা।

আরিফ দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবা মো. আজগার আলী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। সম্প্রতি তিনিও দেশে ফিরেছেন। আরিফ তার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তার এক ছোট বোন ও ছোট ভাই রয়েছে। ছোট ভাই দিনাজপুর সরকারি পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করছেন।

আরিফ অনার্স তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম আসমা উল হুসনা মাশাবা। তিনিও সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আরিফ দিনাজপুরের দক্ষিণ নশরতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন নীলফামারীর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ২০১৪-১৫ সেশনে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

পড়ালেখা শেষ করার পরপরই সাফল্য পেতে শুরু করেন আরিফ। ৪১তম বিসিএস ছিল তার প্রথম বিসিএস। এ বিসিএসে তিনি তথ্য (সাধারণ) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার মেধাক্রম ছিল ১৭তম। আর ৪৩তম বিসিএস ছিল তার দ্বিতীয় বিসিএস। এ বিসিএসেই মায়ের ইচ্ছা পূরণ করে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে ৪র্থ স্থান অর্জন করেন। এছাড়া ৪৪ ও ৪৫-এ দুটি বিসিএসেও প্রিলি-রিটেন উত্তীর্ণ।

আরিফ তার সফলতা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটা অসাধারণ এক অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। দেশের মানুষকে সেবা দিতে পারার যোগ্যতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন, নিজের ছোট্ট গ্রামের মানুষের মুখে নিজের এই সাফল্যের কথা শুনতেও ভালো লাগছে। এই পর্যায়ে এসে জীবনটাকে এক ভিন্ন অবস্থায় অনুভব করছি।

‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন শুনেছি মা গ্রামের সবাইকে বলেছিলেন আমি বড় হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হব। ছোটবেলায় মা অনেক পড়িয়েছেন বলেই আজ আমি এই পর্যায়ে। আমার মা চেয়েছিল বলে আজ আমি এই সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।’

নিজের সফলতার পেছনে সব থেকে বেশি অবদান ছিল তার মা পারুল বেগমের। কারণ তার স্বপ্ন ছিল তার ছেলে বড় হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নিজের স্বপ্নের কথা তিনি গ্রামের মানুষের কাছে বলে বেড়াতেন। মায়ের স্বপ্নের কথা স্মরণ করে আরিফ বলেন, আমার সফলতার পেছনে সবচাইতে বেশি অবদান আমার মায়ের।

‘‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন শুনেছি মা গ্রামের সবাইকে বলেছিলেন আমি বড় হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবো। মায়ের এই কথায় প্রতিবেশীরা তখন হাসাহাসি করতো। অনেক কটু কথা শুনাতো। মা আমাকে ছোটবেলায় অনেক পড়িয়েছেন বলেই আজ আমি এই পর্যায়ে। আমার মা চেয়েছিল বলে আজ আমি এই সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।’’

মায়ের পর নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব তিনি তার স্ত্রী আসমা উল হুসনা মাশাবা দিয়েছেন। নিজের সাফল্যের পেছনে মাশাবার অনুপ্রেরণার কথা জানিয়ে আরিফ বলেন, সে বিশ্বাস করতো আমি অবশ্যই সফল হব। আমার প্রতি তার অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘‘আমার বিসিএস যাত্রার শুরু থেকে সে আমার সহধর্মিণী। আমাদের বিবাহের ৬ বছর চলছে। আমি যখন লিখিত পরীক্ষা দেই সে তখন চার ঘণ্টা হলের বাইরে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিছু পরীক্ষার সময় বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে দাঁড়িয়েছিল সে। বাসার সমস্ত কাজ একা করতো, যাতে করে আমি বেশি বেশি পড়তে পারি। আমার জন্য টিউশনও করিয়েছে। আমাকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না তার অবদান। সে আমার জীবনের লাকি চার্ম।’’

কোনো কোচিং ছাড়াই আরিফ এই অবস্থানে এসেছেন। কোচিংয়ে শুধু পরীক্ষা দিতেন তিনি।

এছাড়া তিনি তার সাফল্যে শ্বশুর-শাশুড়ি ও তার স্ত্রীর ছোট ভাইসহ তার শিক্ষকদের অবদানের কথাও স্মরণ করেছেন। তারা তাকে অনেকভাবে সহায়তা করেছেন এবং সব সময় সাহস যুগিয়েছেন।

আরিফ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তার হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। মেধাবী আরিফ বিসিএস পরীক্ষা কোনো কোচিং ছাড়াই এই অবস্থানে এসেছেন। তিনি কোচিংয়ে শুধু পরীক্ষা দিতেন।

পড়ালেখা শেষে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার শিক্ষার্থীরাও তার এমন অর্জনে খুশি। আরিফ নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, ছাত্রজীবনে অর্জিত জ্ঞানকে  প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশ নিতে চাই। কর্মজীবনে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করবো। এর মাধ্যমে অনাগত জীবনকে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতায় পূর্ণ করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence