যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সুযোগ পেয়েও তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

  © প্রতীকী ছবি

আসন্ন সেমিস্টার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি অনলাইনে ক্লাস যাবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের পর দেশটিতে পড়তে যাওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকলাখ শিক্ষার্থী দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনকি যারা পড়তে যাওয়ার কথা ছিল, তারাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। তাছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি।

এদিকে, উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর হয়, তাহলে এখানে যারা রয়েছে তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। আর যাদের পড়তে যাওয়ার কথা ছিল, তারাতো আসতেই পারবেনা। তবে কি হতে যাচ্ছে সেটি কিছুদিনের মধ্যে বুঝা যাবে।

মূলত বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার্থে গমন করেন। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের মতে, ২০১৮ অর্থবছরে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আয় করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসা এমন বিদেশি শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের মধ্যে গত সোমবার (৬ জুলাই) দেশটির ইমিগ্রেশান অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মোট ক্লাসের কিছু অংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার দেওয়ালের মধ্যে উপস্থিত থেকে করতে হবে। যদি গোটা পঠনপাঠনটাই অনলাইনে সারা হয়, তবে ভিসা বাতিল হবে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের। নতুন করে ভিসা ইস্যু করারও সুযোগ থাকবে না। 

এই বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা দ্য আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন। এ বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, করোনা সংকট কাটিয়ে উঠে যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, তখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক সিদ্ধান্তটি ‘ধোঁয়াটে ও ভয়াবহ’। এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি। সোমবার (৬ জুলাই) ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল কোর্টে করা রিটে ওই সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণার আবেদন করা হয়।

ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই গাইডলাইন (সিদ্ধান্ত) জারি করার আগে ছাত্রদের স্বাস্থ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামতের পরোয়া করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। কোনো নোটিশও পাঠানো হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

তাদের অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ইমিগ্রেশান অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের খামখেয়ালিপনায় হাজার হাজার বিদেশি ছাত্রের যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগ্রহণের আর কোনো সুযোগ থাকছে না। ফল সেমিস্টার আসন্ন। এতো স্বল্প মেয়াদে এই ছাত্রদের নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ারও অবকাশ থাকবে না। একই সঙ্গে এই ছাত্রদের দেশে ফেরা খরচসাপেক্ষ এবং আশঙ্কাজনক।

সংস্থাটির এমন ঘোষণার ফলে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যারা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সেখানে বসবাস করছেন তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর যারা পড়তে যাওয়ার কথা ছিল, তারাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়।

ওহিও ইউনিভার্সিটির মার্স্টাসে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তানিন যায়েদ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এখানে যারা আছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। আর যারা পড়তে যাবেন, তারাতো আসতেই পারবে না। তবে কি হচ্ছে তা অল্প কিছুদিন পর বুঝা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামায় এমবিএ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তারন আহসান। তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেয়েছি। জুনে সেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেটা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে গিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটাও মিস হবে। এখন আমি হোপলেস অবস্থায় আছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চাচ্ছে ওদের টিউশন ফি দিয়ে দিই। কিন্তু সেটা যদি দিয়ে দিই তাহলে কত দিনে যেতে পারব, তারপর দূতাবাস কবে খুলবে, ভিসা প্রসেসিং কীভাবে কী হবে—সব নিয়ে চিন্তায় আছি।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকো বলেন, যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই নির্দেশনা আমাদের জটিল সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ ধরনের নির্বুদ্ধিতার কাজ না করে বিকল্প কোন উপায় বের করা যেত।

তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটি বিশ্বব্যাপী মহামারীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে এবং পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রেখে হার্ভার্ডসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার ক্ষতি করবে।

মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহামারীর সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যখন অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাথি মেরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বের করে দিচ্ছে। তার মতে, এটি নির্বোধ, নিষ্ঠুর এবং ভিন্ন দেশিদের প্রতি বিদ্বেষের প্রমাণ।


সর্বশেষ সংবাদ