হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১০:৪০ AM , আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৭ PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (৪ জুন) একটি প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য জারিকৃত এই সিদ্ধান্তের মেয়াদ আরও বাড়ানো যেতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ’ অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হার্ভার্ডের ‘বিদেশি শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক, চরমপন্থার ইতিহাস এবং অপরাধের বৃদ্ধির’ কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই প্রোক্লেমেশন আবারও একটি অবৈধ এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ, যা হার্ভার্ডের সংবিধানসম্মত অধিকার লঙ্ঘন করছে। তবে হার্ভার্ড তার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’
এই প্রোক্লেমেশন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী হার্ভার্ডে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক যে-সব শিক্ষার্থীর ভিসা ইতোমধ্যে রয়েছে বা আবেদন করেছে, তাদের অতিরিক্তভাবে যাচাই-বাছাই করতে। এছাড়া যে-সব বর্তমান শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার আওতায় পড়বে, তাদের শিক্ষাগত বা বিনিময় ভিসা বাতিলের বিষয়েও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আসে এমন এক সময়ে, যখন বোস্টনের যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক অ্যালিসন বুরোঘস ঘোষণা দেন যে, তিনি হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। বর্তমানে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার এক চতুর্থাংশই আন্তর্জাতিক।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনের একাধিক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বিলিয়ন ডলারের অনুদান ও সরকারি অর্থায়ন স্থগিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা। হার্ভার্ড বলছে, এটি মূলত প্রতিশোধমূলক। কারণ তারা প্রশাসনের এসব চাপে সাড়া দেয়নি।
গত ২২ মে, মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম ঘোষণা দেন যে, হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ (SEVP) সার্টিফিকেশন বাতিল করা হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারত না। তবে সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বিচারক বুরোঘস সাময়িকভাবে স্থগিত করেন।
পরবর্তীতে প্রশাসন জানায়, তারা এই সার্টিফিকেশন বাতিলের বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হবে। তবুও, বিচারক জানিয়েছেন, হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় তিনি দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চান।
এই ঘটনার পরদিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি অভ্যন্তরীণ বার্তায় বিশ্বের সব মার্কিন কনস্যুলেটকে হার্ভার্ডে যেকোনো উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রার্থীদের অতিরিক্তভাবে যাচাই করার নির্দেশ দেয়।
প্রোক্লেমেশনে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—বিদেশি শত্রুরা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহজ প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে গবেষণা চুরি, ভুয়া তথ্য ছড়ানো এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এফবিআই দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে সতর্ক করে আসছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া প্রোক্লেমেশনে দাবি করা হয়েছে, হার্ভার্ডে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধ বেড়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু আচরণগত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের “অবৈধ বা বিপজ্জনক কার্যক্রম” সম্পর্কেও যথাযথ তথ্য সরবরাহ করেনি বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে হার্ভার্ডে পড়তে আগ্রহী হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হার্ভার্ড ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।