লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে ৫ ছাত্র সংগঠনের যৌথ বিবৃতি 

  © সংগৃহীত

গতকাল (১৩ ই আগস্ট) ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ লিয়াজোঁ কমিটির দেওয়া বিবৃতি ও ছাত্র সংগঠনের সাথে আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো তা একে অপরের সম্পুর্ণ বিপরীত দাবি করে সে সম্পর্কে বৈঠকে উপস্থিত ৫ টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছন।

আজ (১৪ আগস্ট)  সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া এই যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে বলা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি গতকাল যে বিবৃতি প্রদান করেছে সেখানে আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি বিবৃতিতে ছাত্র রাজনীতি কার্যত এক মাসের জন্য স্থগিতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যার সাথে বৈঠকে আমরা কেউই একদমই একমত হইনি I
লিয়াজোঁ কমিটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকা থাকবে না।’ এ সম্পর্কে গতকাল বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে আজ বিবৃতিতে তার সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

বৈঠকে আলোচনা হয়েছিলো– ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করবে। একই  সাথে এই প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে নিয়মিত বিরতিতে বসে মত বিনিময়-আলোচনা করবে যা  ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করবে। 

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন– ছাত্র - জনতার এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নেতৃত্বে এই গণঅভ্যুণ্থানে প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। আমরাও প্রথম থেকেই এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি, আন্দোলনকে বেগবান করতে সহযোগিতা করেছি।  

তারা বলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে’ এরকম আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগ নানাভাবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের কাছে বারবার প্রকাশ করেছি। এ পরিস্থিতিতে লিয়াজোঁ কমিটি গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টায় টিএসসিতে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সকল ছাত্রসংগঠনগুলোকে আলোচনার জন্য ডাকেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা ছাত্র সংগঠনগুলোর বক্তব্য খোলা মনে শুনবেন বলে আমাদের জানান। তাঁদের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা বৈঠকে উপস্থিত হই। বৈঠকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন  সরকারের উপদেষ্টা জনাব নাহিদ ইসলাম ও জনাব আসিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন – লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে সমন্বয়ক মাহফুজ আলম, সদস্য নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও আরিফুল ইসলাম আদিব। বৈঠকে আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখি। শুধু আমরাই নই, প্রায় সকল সংগঠন এ বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। একই সাথে সকলে ওয়াদা করেন ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাস- দখলদারিত্ব এবং জুলুমের পরিবেশ নতুন করে তৈরি করতে দেওয়া  হবে না। কোন সংগঠন এমনকি এই প্ল্যাটফর্ম থেকেও এমন কিছু করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে আমরা আমাদের মতামত এইভাবে ব্যক্ত করি, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্র- জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের লড়াইয়ে সামিল হয়েছে, জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। সংগঠন করার অধিকার হলো মত প্রকাশের অধিকার। এই গণতান্ত্রিক অধিকার ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান থেকে পাওয়া ‘নতুন বাংলাদেশে’ থাকবে না, এটা ফ্যাসিস্ট আচরণ যা আওয়ামীলীগ বজায় রেখেছিল। ফলে মত প্রকাশের অধিকারের অংশ হিসেবে ছাত্র রাজনীতি থাকবে। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সবার জন্য বৈধ সিট বন্টন,  সন্ত্রাস- দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস এবং গণরুম-গেস্টরুম প্রথার উচ্ছেদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একসাথে লড়বো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল এবং ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস- দখলদারিত্ব নির্ভর ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকবো। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে এসব অপকর্ম করতো বলেই আমরা তাদের তাড়িয়েছি। ফলে সন্ত্রাস- দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের  অবস্থান স্পষ্ট।

তারা বলেন, সামনের দিনে কোনো ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের চেষ্টা করলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী কোন দল বা সংগঠন করবে – এটা তার মত প্রকাশের অধিকার। এই অধিকার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার হরণ করেছিলো। ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য কোন সংগঠন করার দায়ে ছাত্রদেরকে হল থেকে মেরে পিটিয়ে বের করা হতো, অনেক ক্ষেত্রে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। আমরা চাই, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা যে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সেই প্ল্যাটফর্ম আরো প্রতিনিধিত্বমূলক ও শক্তিশালী হোক! এই প্ল্যাটফর্ম কোন ধরনের অগণতান্ত্রিক নীতি ঘোষণা না করুক!

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়,  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ ‘ ছাত্র রাজনীতি নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সচেতনতা ’ শীর্ষক যে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করুন। এর জবাবে জনাব নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন পোস্ট ডিলিট করলে অনেক কথা উঠবে,সমস্যা হবে। তাই পোস্ট ডিলিট না করুক। কিন্তু আপনাদের  (ছাত্র সংগঠনসমূহ) সাথে পরামর্শ ছাড়া ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত হবে না।’ এখানে উল্লেখ্য যে, যেহেতু বৈঠকে প্রায় সবগুলো সংগঠন ছাত্র রাজনীতির পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে এবং ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিরোধিতা করে। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ছাত্র রাজনীতি বন্ধে এখনই কোন সিদ্ধান্ত হবে না। এটি বিবৃতি আকারে দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ