সন্তান হারিয়ে দিশাহারা মা, বাকরুদ্ধ বাবা বসে থাকেন ঘরের কোনে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:২২ PM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩০ PM
একমাত্র ছেলে হৃদয় আহমেদ শিহাব যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো তখনই সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজে পাঠিয়ে দেন দরিদ্র শাহ আলম হাওলাদার এবং নাছিমা বেগমের দরিদ্র পরিবার। ফার্নিচারের দোকানে প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করতো শিহাব। বেতন যা পেতো নিজের খরচ রেখে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। সংসারের হাল কেবল ধরতে শেখা হৃদয় আহমেদ শিহাব (১৮) গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বাড্ডায় কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
শিহাবের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার মা ও বাবা। বাকরুদ্ধ বাবার নীরবতা ও মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে মরদেহ এসে পৌঁছালে শোকের মাতম ওঠে। শনিবার তার দাফন সম্পন্ন হয়।
আট বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান শাহ আলম হাওলাদার। এরপর ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। এরইমধ্যে হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসারে তৈরি হয় আর্থিক টানাপড়েন। হাল ধরতে বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা বেগম। সেলাই এর কাজ করে কোনোমতে চলতে থাকে সংসার।
সরজমিন মঙ্গলবার নিহত শিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সন্তান হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা নাছিমা বেগম। শোকে বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকেন ঘরের এক কোনে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করে উঠছেন বোন, শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকার ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার ‘হাসান স্টিল এন্ড ফার্নিচার’-এ কাজ করতো শিহাব।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যায় সে। খাবার শেষ করে পাশেই কারখানাতে ফিরতে গিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। তখনই একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শিহাবের শরীরে। বুকের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে ওপর পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায় গুলি। তখন ওই এলাকার মসজিদের এক ইমাম (পূর্ব পরিচিত) সঙ্গে ছিল শিহাবের।
তিনি খবর দেন ফার্নিচার দোকানে। পরে খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। চিকিৎসা না পেয়ে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মনির মোল্লা বলেন, ‘শিহাব আমার দোকানে কাজ করতো। দুপুরে খাবার খেয়ে কারখানায় ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। বুকের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল।’
নিহত শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।’ এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।’