ঢাবিতে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনে’ যেতে চায় ছাত্রদল, প্রতিহত করবে ছাত্রলীগ
- মুহাইমিনুল ইসলাম, ঢাবি
- প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২২ AM , আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৫ AM
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আসতে পারছেন না কেন্দ্রীয় ও শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তবে বিএনপির এক দফা দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচীর পর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে প্রায়ই ঝটিকা কর্মসূচি পালন করছেন নেতা-কর্মীরা। তারা ক্যাম্পাসে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ ঘোষণা দিয়েছেন, যেটিকে তারা বলছেন, ‘হার্ডলাইন’। তবে তাদেরকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
জানা গেছে, বিএনপি ঘোষিত হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে নিয়মিত বিক্ষোভসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ঝটিকা মিছিলের পাশাপাশি গত ৫ নভেম্বর ক্যাম্পাসের ৯টি ফটকে তালা দেয় ছাত্রদল। যদিও সে তালা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি ছাত্রলীগ।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলা ও ভয়ভীতির কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ না পেলেও এবার আর ছাড় দেবেন না তারা। সে জন্য ক্যাম্পাসে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছেন। আরও ‘হার্ডলাইনে’ যাবেন তারা। এখানেই চূড়ান্ত আন্দোলন হবে। ছাত্রলীগ বাধা দিতে আসলে প্রতিহত করবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে যে এক দফা আন্দোলন চলমান, তাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সম্মুখে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যতবার ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি এবং আমাদের সহবস্থান ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছি, ততবারই আমরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি।’
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলা ও ভয়ভীতির কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ না পেলেও এবার আর ছাড় দেবেন না তারা। সে জন্য ক্যাম্পাসে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছেন। আরও ‘হার্ডলাইনে’ যাবেন তারা। এখানেই চূড়ান্ত আন্দোলন হবে।
তিনি বলেন, ‘গত ৬ নভেম্বর (সোমবার) সকালে কলাভবনের নিচতলায় যে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে, এটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত যা ছাত্রলীগের দ্বারাই সম্ভব।’
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। তাদের অপকর্মে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আতংকের প্রতিশব্দ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রলীগ নেগেটিভ রাজনীতিতে অভ্যস্ত, তাই ক্যাম্পাসে তাদের অতীত ঐতিহ্যগত অপকর্ম ঢাকতেই উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’
আরো পড়ুন: ৫২ বছরে বিজ্ঞানের ৯, কলা ও সামাজিকের ৬ শিক্ষক ঢাবির ভিসি
তবে ছাত্রদলের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, ছাত্রদল যতই হার্ডলাইনে যাক, তাদের মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই প্রতিহতের নির্দেশনা রয়েছে নেতা-কর্মীদের ওপর।
ছাত্রদলের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, ছাত্রদল যতই হার্ডলাইনে যাক, তাদের মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতর অরাজকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদেরকে প্রতিহত করবে। তারা রাজনীতি করুক, কিন্তু রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করলে সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের কখনোই সমর্থন করবে না। কলাভবনে ককটেল ও বোমাসদৃশ যে বস্তু পাওয়া গেছে, এর সঙ্গে ছাত্রদলের সম্পৃক্ততা আছে।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘বিএনপিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছে। তাদের অপকর্ম সম্পর্কে সবাই জেনে গেছে। ২৮ অক্টোবর তারা নৃশংসভাবে পুলিশ হত্যা করেছে, অবরোধের নামে গাড়ি পুড়িয়েছে। তাদের হাতে দেশ আজ নিরাপদ নয়। ঢাবি ক্যাম্পাসে ককটেল ও বোমা সদৃশ যে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে ছাত্রদল সম্পৃক্ত।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রদল যদি ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করুক। রাজনীতির নামে কোনো প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তাদেরকে ছাত্রলীগ প্রতিহত করবে।’