ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হলের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়া বাধ্যতামূলক, মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা

  © লোগো

আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগের তিন ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হবে।

এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের। মেসেঞ্জার গ্রুপে এই নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, এই কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি যেনো নিশ্চিত করা। এমনকি উপস্থিত না থাকলে পরবর্তীতে হল ছাড়া করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, গতকাল থেকে মেসেঞ্জার গ্রুপের একাধিক স্ক্রিনশট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এমনই কিছু স্ক্রিনশট এসেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে। সেখানে দেখা যায়, হলের নেতারা যেকোনো মূল্যে সবাই যেনো হলে অবস্থান করে এবং প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকে সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়। 

বিভিন্ন হল থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বিশেষত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রোগ্রামে থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে হলের পদপ্রত্যাশী নেতাদের। প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকলে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, আজকের ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে সর্বোচ্চ উপস্থিতি যেনো নিশ্চিত করা যায় সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ছাত্রলীগের হলের নেতারা। এতে হল থেকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া, বঙ্গবন্ধু, বিজয় একাত্তর, জগন্নাথ, জসীমউদ্দিন, সূর্যসেন কিংবা জহুরুল হক হল কোনটাই বাদ যাচ্ছে না। কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই এসব হুমকি দিয়ে প্রোগ্রামে উপস্থিত নিশ্চিত করতে। এমনকি মেয়েদের হলেও অনুরূপ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

একটি স্ক্রিনশটে নেতা তার কর্মীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। স্ক্রিনশটের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো- “জুমার নামাজের আগেই সবাই খেয়ে নিবা, নামাজ শেষ হওয়ামাত্র বের হবো আমরা। কাউকে যেন না বলতে শুনি নামাজের পড়ে খেতে যাওয়ার কথা যেনো না শুনি; সব রুমের সবাইকেই আসতে হবে, যারা বিভিন্ন কাজে হলের বাইরে তাদের ফিরে আসতে বলো; যে রুম থেকে মিসিং হবে সে রুমে রাতে তৃতীয় বর্ষ যাবে; প্রোগ্রামটা গুরুত্বপূর্ণ,কেউ মিস দেয়ার চিন্তা করিও না। শুক্রবার আমরা কমপক্ষে ৬০ জন নিয়ে প্রোগ্রামে যাবো। অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সবার থাকা লাগবে; জুমার নামাজ শেষ করা মাত্রই মিনি গেস্টরুমে থাকবে সবাই। আবারো বলছি আগেই খেয়ে নিবা।”

এসময় প্রোগ্রামের জন্য দ্বিতীয় বর্ষের কাউকে যেনো ছুটি না দেয়া হয় সেটা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং যারা এই প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবে না তাদের হলে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়। 

অন্য আরেকটি হলেও একই চিত্র দেয়া যায়। সেখানে বলা হয়, “আজকে সবাইকে থাকতেই হবে। যে থাকবা না সে নিজ থেকে হল ছেড়ে দিবে। যে আজকে আসবে না সে আজকের পর থেকে হলে কিভাবে থাকে দেখবো। কালকে ভাইটাল প্রোগ্রাম, সবার থাকা বাধ্যতামূলক।”

নাম ও হল প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, হলটা তারা নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছেন। একটা সিট দেওয়ার নাম করে সারা বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করিয়ে থাকেন। রাতে গেস্ট রুম, দিনে প্রোগ্রাম চলছেই, এ যেনো শেষ হবার নয়। জোর করে, হুমকি দিয়ে, হল থেকে বের করে দিবে বলে সবাইকে প্রোগ্রামে যেতে বাধ্য করা হয়। কথা না শুনে প্রোগ্রাম না করলে শুনতে হয় অকথ্য ভাষায় গালাগালি, শুরু হয় মানসিক অত্যাচার। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে আসে কিন্তু এসবের ফলে সবাই পড়াশোনা বিমুখ হয়ে ভিন্ন পথে ধাবিত হয়।

ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ জিম্মি৷ অথচ এরা কেউ রাজনৈতিক দলকে মাথা বর্গা দেবার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি৷ নিজেদের অসারতা, নীরবতা আর পক্ষপাতদুষ্টতার জন্য ইতিহাসের পাতায় দায়ী থাকতে হবে ভিসি আখতারুজ্জামানের প্রশাসনকে৷

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথাকে অস্বীকার করে বলেন, এটা মিথ্যা কথা যে হল থেকে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরাও হলে থেকেছি আমাদের কেউ জোর করে হলে নিয়ে যায়নি, আমরা স্বেচ্ছায় রাজনীতি করেছি। 

কিছু প্রমাণ হিসেবে স্ক্রিনশট এর প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, এসব বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাধীন এবং তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কেউ জোর করে প্রোগ্রামে নিলে তারা অবশ্যই প্রতিবাদ করতো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence