ফুলপরী ‘বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামালে’র উত্তরসূরি: ছাত্রলীগ সভাপতি

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরীকে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামালের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্মান্তিক ঘটনাটি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের হৃদয় ছুঁয়েছে। ফুলপরী প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। পাবনা থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গিয়ে ন্যায়বিচারের জন্য যে সাহসিকতা ও অদম্য স্পৃহা দেখিয়েছে। আমরা মনে করি, ফুলপরী বাংলাদেশের বেগম রোকেয়ার সত্যিকারের উত্তরসূরি। ফুলপরী সুফিয়া কামালের সত্যিকারের উত্তরসূরি। 

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট র্যাগিং এন্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। 

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, যদি বুলেট গ্রেনেড মোকাবিলা করে একজন নারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেন। তাহলে বাংলাদেশের একজন মেয়ে সমস্ত সামাজিক রক্ষণশীলতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, দায়সারা রাজনৈতিক বক্তব্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিবাদ করতে জানে।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিবাদের নাম। ফুলপরী ন্যায়বিচারের প্রতীকের নাম। আজকের র্যাগিং ও যৌন হয়রানি আন্দোলনের প্রতীক হচ্ছেন এই ফুলপরী। আজকে ফুলপরী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিবাদন ও স্যালুট জানাই। 

তিনি বলেন, নিপীড়কের যেই দলীয় পরিচয় বা ক্ষমতা থাকুক না কেন আমাদের ইস্পাত-দৃঢ় ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের সামনে সমস্ত দম্ভ ভেঙে যাবে এবং সমস্ত প্রশাসনিক অসাড়তা ভেঙে যাবে। আমরা বাংলাদেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব।

শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে। সেই সমস্যা নিরসন করার জন্য আমরা এসেছি। যৌন হয়রানি ও র‌্যাগিং করা কখনো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সিলেবাসের আওতাভুক্ত ছিল না। আমরা সবসময় এটাকে ট্যাবু বলেছি। আমরা বলেছি এটা সিলেবাসের বাইরের বিষয়।

সাদ্দাম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় ‘আউট অফ দ্যা বক্স’ চিন্তা করতে জানে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ‘আনঅর্থডক্স’ চিন্তা করতে জানে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ‘ক্রিয়েটিভ’ চিন্তা করতে জানে। এটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন কর্মসূচির মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। আমাদের সমাবেশ বাবা-মায়েদের দুর্ভাবনা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা নিরসন করার সমাবেশ।

ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশে সেই বাস্তবতা রয়েছে; আমরা র‌্যাগিংকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছেলে বা মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন করা, আত্মমর্যাদাকে হানি করা, উপহাস করা, কৌতুক করা কিংবা শারীরিক লাঞ্ছনা করা। আমরা অনেক সময় এগুলোকে র‌্যাগিং বলে বৈধতা দেওয়া চেষ্টা করি। আমরা জানি যে, এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হয়। 

এমন নানা কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং এর জন্য তাদের স্বপ্ন গুলো বিঘ্নিত হয় জানিয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা করতে চাই, র‌্যাগিং একটা ক্রিমিনাল অফেন্স, র‌্যাগিং একটা ফৌজদারি অপরাধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিরোধী অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এ বার্তাটি নিয়ে যেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবিষয়ে সচেতন করতে চাই। 

সাদ্দাম মনে করেন, এসব ঘটনার পেছনে সবারই দায় রয়েছে। ছাত্র রাজনীতির দায় রয়েছে।  ছাত্র সংগঠনগুলোর দায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কলেজ প্রশাসন, হল প্রশাসন ও হোস্টেল প্রশাসন সবার দায় রয়েছে। আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত মাত্রা সচেতনতা নেই বলে এসব ঘটনা বারবার ঘটছে।

এর আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হয়ে পদযাত্রা করে সন্ত্রাস-বিরোধী রাজু-ভাস্কর্যে এসে তাদের কর্মসূচি শুরু করে। কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবির) নবীন ছাত্রী ফুলপরীকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম। নির্যাতনের পরের দিন ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী।

সে সময় নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী জানিয়েছিলেন, ৪ ঘণ্টা ধরে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিল আর এর ফাঁকে ফাঁকে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছিল। নির্যাতনের একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণ করা হয়। তখন কাঁদতে কাঁদতে আমি পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তারা কোনো কথা শোনেননি। গণরুমে এ সময় উপস্থিত সাধারণ ছাত্রীরাও কোনো কথা বলেননি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে; যা উচ্চ আদালতের কাছে পাঠাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence