কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির জেরে জুনিয়রকে মারধর ঢাবির ছাত্রলীগ নেতার

ঢাবি জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব বিশ্বাস নয়ন
ঢাবি জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব বিশ্বাস নয়ন  © সংগৃহীত

কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের দ্বিতীয় বর্ষের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই হলের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব বিশ্বাস নয়নের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ও জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বাঁধন বিশ্বাস। অভিযোগে কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়টিও উঠে এসেছে। 

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর তিনি এই অভিযোগ দেন। তবে নয়ন মারধরের কথা শিকার করলেও যৌন হয়রানির অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 
 
লিখিত অভিযোগে বাঁধন বিশ্বাস বলেন, ঘটনার সূত্রপাত সরস্বতী পূজার পর থেকে। পূজার পরদিন রাজীব বিশ্বাস নয়ন সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া আমার এক বান্ধবীকে রাতে ফোন দিয়ে বলেন, তোমাকে ছোট ছোট গেঞ্জি-প্যান্ট, ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরলে হট লাগে। পরবর্তীতে এসব বিষয় তিনি আমাকে বললে ঘটনাটি রাজিব বিশ্বাসের বান্ধবীর সঙ্গে শেয়ার করি। এরপর থেকে তিনি (রাজিব বিশ্বাস) আমাকে মেসেঞ্জারে হুমকি দিয়ে আসছে।

“সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার হলের ৩০১৪ নাম্বার রুমের সামনে তিনি আমাকে ৩০ মিনিট ধরে গালাগালি করে। আমি সরি বললেও পরবর্তীতে তিনি রাত ১২টার দিকে আমাকে রুমে এসে ভাত খাওয়া অবস্থায়' ঘাড়ে, মুখে, কানে চড়, ঘুসি মারে। এসময় রুমে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকাশ মন্ডল থাকায় তিনি আমাকে তাৎক্ষণিক বাঁচান। তবে মারধরের কারণে আমার অবস্থা বেশি ভালো নয়, এখন হলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাঁধন বিশ্বাস বলেন, গতকাল রাত ১২টার পর ঘটনায় আমি মাফ চাওয়ার পরেও আমার রাতের খাওয়া অবস্থায় সে আমার কানে, ঘাড়ে মাথায় আঘাত করে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে অবস্থান করছি।

তিনি আরও বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি এবং হল প্রভোস্ট স্যারের কাছে আবেদন করছি যেনো তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রলীগের ভাইদেরও বলেছি যেনো তাকে ছাত্রলীগ থেকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। আগামী রবিবারে আমি আমার ডিপার্টমেন্ট অভিযোগ করবো তিনি যেনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে কোনো মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ জড়িন না হতে পারে।

অভিযুক্ত রাজিব বিশ্বাস নয়ন বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে অপবাদ। আমি হল ক্যান্ডিডেট, তাই আমার বিরুদ্ধে তারা লেগেছে। আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এই অপচেষ্টা চালিয়েছে। বাঁধন আমার পরিচিত ছোট বোনকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে রোকেয়া হলের সামনে যৌন হয়রানিরচেষ্টা করে। পরে মেয়েটি আমাকে ফোন দিয়ে বাঁধনের নামে বিচার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। আমি তাকে হলে বুঝানোর চেষ্টা করি এবং বকাঝকা করি।

তিনি বলেন, ‘তার মাঝে অনুশোচনা না আসায় তাকে কয়েকটা থাপ্পড় দেই। সে নিজের খারাপ কাজকে ঢাকতে ঘটনাকে অন্যদের প্ররোচনায় অন্যদিকে মোড় দিয়ে আমার সুনাম নষ্ট করতে চাইছে। আমার কাছে তার বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রমাণ আছে। প্রক্টর ও প্রভোস্ট স্যারদের সামনে সেটা উপস্থাপন করা হবে এবং আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

অভিযোগের ব্যাপারে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে ফোন দিয়ে অভিযোগ দিয়েছে। আমি একজন হাউজ টিউটর পাঠিয়ে তার বক্তব্য শুনেছি। পরবর্তীতে আমি হল প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে এর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছি।

থানায় মামলা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত, সে চাইলে মামলা করতে পারে। তবে প্রশাসন থেকে তাদের পুনরায় কোনো সমস্যায় জড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ