উইলস লিটল ফ্লাওয়ারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার এত দাপট!
- ইরফান এইচ সায়েম
- প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:৩৬ PM , আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৪ PM
রাজধানীর রমনায় খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের (জিবি) সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরনো। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন; শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছেন নানান অভিযোগও।
পরবর্তীতে অভিযোগগুলো যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রহস্যজনকভাবে এসব তদন্ত পুরোপুরিভাবে আলোর মুখ দেখে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকাকালীন সময়ে জিবি সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন টিটু। এরপরও ক্ষান্ত হননি তিনি। প্রতিষ্ঠানটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের নায়কে পরিণত হয়েছেন তিনি। গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৫১ সদস্যের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন টিটু।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম বারের মতো জিবি সভাপতি নির্বাচিত হন টিটু। দুই বছর মেয়াদ শেষ হলে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো জিবি সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাকে। জিবির ১৩ সদস্যের মধ্যে অধ্যক্ষ পদাধিকার বলে সদস্য সচিব। বাকিদের মধ্যে দাতা সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি থাকেন। সদস্যের মধ্যে আশিকুর রহমান নাদিমও রয়েছেন যিনি টিটুর আপন সহোদর ভাই।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রথমবার জিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আরিফুর রহমান টিটু বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কলেজের সিনিয়র শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জুনিয়র এক প্রভাষক আবুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধক্ষের পদে বসান। এ নিয়ে তদন্তের পর শিক্ষাবোর্ড থেকে আপত্তি তোলা হলেও বর্তমানে স্বপদে বহাল আছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন।
অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মসহ প্রতিষ্ঠানটির একাধিক অনিয়ম উঠে আসে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শিক্ষাবোর্ড থেকে তদন্তকারী দলের। তখন এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তা মানা হয়নি।
এদিকে, গত বছরের নভেম্বরের স্কুলটির অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে জিবি সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুনীর্তির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দিলে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
অভিযোগ দেওয়া এক অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটি স্বনামধন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠানের সার্বিক শিক্ষার মান উর্ধ্বমুখী হলেও বর্তমান জিবি সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় তা ব্যর্থতায় পর্যবসিহ হচ্ছে। এখনই তাদের লাগাম টেনে না ধরলে আগামীতে তার ভয়াবহ পরিণতি দেখতে হবে। এজন্য সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানিয়েছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মাউশি এ কমিটি গঠন করে। মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক, উপ-পরিচালক (কলেজ) ও সহকারী পরিচালককে (কলেজ) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ােগ করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সুস্পষ্ট মতামতসহ ২ প্রস্থ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত মাসের শেষের দিকে মাউশি থেকে জিবি সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযােগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ মে তারিখের স্মারকে এই প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠাটির নানা অনিয়ম-দুর্নীতি উঠে আসে। এসময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ৫ দিনের মধ্যে এসবের লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। যদিও ৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাউশির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা ব্যাখ্যা দিতে পারিনি। এজন্য আরও ১৫ দিন সময় চাওয়া হয়েছে।
সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযােগের তদন্ত প্রতিবেদনে যা রয়েছে-
১) কলেজে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে জুনিয়র প্রভাষক আবুল হােসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয় যা বিধি সম্মত হয়নি।
২) গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ০১/১১/২০১৭ ইং তারিখে বর্তমান কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের এফডিআর এবি ব্যাংক হতে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হলে অধ্যক্ষসহ কর্তৃপক্ষ তা সরবরাহ করেননি। এই কারণে ব্যক্তিগত কমিশন কেউ পেয়েছেন কিনা তা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
৩) কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটো প্রায় প্রতিদিনই অধ্যক্ষের কক্ষে তার নিজের জন্য রক্ষিত চেয়ারে বসেন এবং সদস্য মােঃ মােজাম্মেল হক দোতলায় ভিন্ন একটি কক্ষে তিনি একা বসেন এবং সার্বক্ষনিক প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম তদারকি করেন। ফলে প্রয়ােজনে কোন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক অধ্যক্ষের সাথে সহজে দেখা করতে পারেন না।
৪) বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে গভর্নিং বডির সদস্য মােঃ মােজাম্মেল হক ও আশিকুর রহমান নাদিম (চেয়ারম্যানের সহােদর ভাই) প্রমােশনের ব্যবস্থা করেছেন এ বিষয়ে তথ্য চেয়েও অধ্যক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি।
৫) কলেজের জমির কাগজ-পত্রাদি ভূল-ভ্রান্তি সংশােধনের নামে কমিটির সদস্য মােজাম্মেল হক ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযােগের বিষয়ে অধ্যক্ষ যথাযথ রেকর্ডপত্র প্রদান করে তদন্ত কমিটিকে সহযােগিতা করেননি। যে সকল রেকর্ডপত্র জমা দিয়েছেন সেখানেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর নাই। রেকর্ডে যতটুকু দেখা যায় বিধিবিধান অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা হয়নি।
৬) কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সদস্য মােজাম্মেল হক পরীক্ষার সেন্টার ম্যানেজ করার নামে এইচএসসি-২০১৯ পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাথাপিছু ২ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তথ্য ও মােবাইল নম্বর চেয়ে অধ্যক্ষের কাছ থেকে তথ্যাদি পাওয়া যায়নি।
৭) কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আশিকুর রহমান নাদিম প্রতিষ্ঠানের পুরাতন আসবাবপত্র ও পরীক্ষার উত্তরপত্র টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বিষয়ে উত্তরপত্র বিক্রির তথ্য দেয়া হলেও আসবাবপত্র বিক্রির কোনাে তথ্য দেয়া হয়নি। পত্রিকা বিক্রির ক্ষেত্রে বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
৮) বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনের ৫ম, ৮ম, ১০ম ও দ্বাদশ শ্রেণির বিশেষ ক্লাশ, মডেল টেষ্ট এবং ইংরেজি মাধ্যমের মােক টেস্ট বাবদ আহরিত অর্থের ৩০% টাকা গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ জোর দখল ভােগ করেন বিষয়ে প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সরবরাহ করা হয়নি।
৯) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হােসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে থাকার পরও উনার দায়িত্বের অতিরিক্ত কলেজের শাখা প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত সম্মানি গ্রহণ করেছেন যা বিধিসম্মত নয়।
১০) কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়ােগের জন্য ২৫/০৩/২০১৯ তারিখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মােট ২২টি আবেদন পড়েছে। অধ্যক্ষ নিয়ােগের জন্য মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে তার প্রতিনিধি চেয়ে যে আবেদন অধ্যক্ষ করেছেন তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বেসরকারি শাখার নথিতে নেই। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ মাউশির খুব কাছাকাছি অবস্থিত। আবেদন জমা দেয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কেন প্রতিনিধি মনােনয়ন দেয়া হচ্ছে না বা আবেদনটি কোথায় আছে বা আদৌ জমা হয়েছে কিনা এ সংক্রান্ত কোন সঠিক তথ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে অধ্যক্ষ নিয়ােগ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
১১) উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা এর ০৩/০৫/২০১৯ তারিখ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক/কর্মচারী নিয়ােগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। শিক্ষকের পদ হলাে ২টি-সহকারী শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক শাখা)। সহকারী শিক্ষকের জন্য শিক্ষাগত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে-স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক(সম্মান)সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি/সম্মান অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক(পাস)সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। কিন্তু ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়নি। সহকারী শিক্ষক(প্রাথমিক শাখা) জন্য শিক্ষাগত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে এইচএসসি বা সমমান, স্নাতকে অধ্যয়নরত প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের জন্য যথার্থ হয়নি এবং সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক শাখা)ক নিয়োগের জন্য এইচএসসি বা সমমান পাস নিঃমানের যা কোন বিধিবিধানে নেই। সুতরাং এ ধরনের নিয়ােগ জনবল কাঠামাে ও প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়নি।
(১২) কলেজের জিবির সহায়তায় অধ্যক্ষ ক্ষমতা অপব্যবহার করে জুলাই/২০১৮ থেকে এপ্রিল/২০১৯ মােট ১০ মাস যাবৎ শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট), বৈশাখী ভাতা, অব্যবহৃত নৈমিত্তিক ছুটি ভাতা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ভাতা এবং প্রণোদনা ভাতা বিগত ২ বছর যাবৎ বন্ধ রেখেছেন।
১৩) কলেজের অবসর গ্রহণকারী ১০ জন শিক্ষকের গ্রাুইটিসহ বিভিন্ন পাওনাদি ২ বছর যাবৎ প্রদান না করার বিষয়ে অধ্যক্ষ, সিনিয়র সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা অবসরকালীন কী কী সুবিধা পেতে পারেন তাহার দিক নির্দেশনা ও মতামত প্রদানের জন্য পত্র প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে মাউশির সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফাইল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সেখানে এই ধরণের কোন পত্র পাওয়া যায়নি। কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান হয়েও কেন পত্র জমা হচ্ছে না বা কেন সমাধান হচ্ছে না এগুলাে দেখার দায়িত্ব অধ্যক্ষসহ কলেজ কর্তৃপক্ষের কিন্তু তাদের দায়িত্বে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়।
১৪) কলেজের অধ্যক্ষসহ জিবির সাবেক কেয়ার টেকার তারিকুল আজম খানকে কেয়ারটেকার কাম স্টোর পদ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি এবং পরবর্তী সহকারী শিক্ষকা বাংলা মাধ্যম, দিবা শাখা)র পদে নিয়ােগ প্রক্রিয়া ছাড়া পদায়ন বিধিসম্মত হয়নি।
১৫) কলেজের জিবির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ব্যয়ের বিল ভাউচার চাওয়া হলে অধ্যক্ষ তা আংশিক সরবরাহ করেন।
১৬) তদন্ত চলাকালীন সময়ে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে নাজমা হােসেন লাকী, শাখা প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) (প্রভাতি শাখা, ইংরেজি মাধ্যম)-কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কারণ দর্শানাে নােটিশ প্রদান করেন। পরে সাময়িক বরখাস্ত এবং এরপর তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়ােজন।
১৭) কলেজের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তের আলােকে শ্যামলী হােসেন, সিনিয়র শিক্ষক (গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বাংলা মাধ্যম, প্রভাতি শাখা)-কে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে প্রভাষক পদে পদোন্নতির লক্ষ্যে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরিচালনা পর্ষদের ৭৪তম সভার আলােচ্য বিষয় ৭ এর সিদ্ধান্তের আলােকে তাকে ০১/১০/২০১৩ খ্রি, তারিখ থেকে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রভাষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয় কিন্তু প্রভাষক পদে কোন নিয়ােগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। সুতরাং প্রভাষক পদে নিয়ােগ জনবল কাঠামাে ও প্রচলিত বিধি বিধান অনুসরণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অধ্যক্ষ ও সভাপতির দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি
১৮) বর্তমান কমিটির পূর্বে বিভিন্ন সময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়ােগ পেয়েছেন বলে জানা যায়। বর্ণিত বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ কলেজের গভর্নিং বডির কাছে তথ্য চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি। ফলশ্রুতিতে আরাে অধিকতর তদন্ত করা প্রয়ােজন।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নানান অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে তদন্তের অগ্রগতি কতদূর, জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়টি দেখভাল করছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই।
এ বিষয়ে কলেজের জিবি সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।
অনিয়ম-দুনীর্তির প্রতিবাদ করায় চাকরি হারালেন নাজমা হােসেন লাকী: কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কলেজের প্রভাতী শাখার ইংরেজি মাধ্যমের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) নাজমা হােসেন লাকীকে কারণ দর্শানাে নােটিশ প্রদান করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। পরে সাময়িক বরখাস্ত এবং চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডের কাছে গেলে আরবিট্রেশন কোর্টে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে। তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক রবিউল আলম এটির তদন্ত করছেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
কলেজের চাকরিচ্যুত শিক্ষিকা নাজমা হােসেন লাকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে কোন নিয়মনীতি না মেনেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডের আরবিট্রেশন কোর্টে আছে। সেখান থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। আশা করি শিক্ষাবোর্ড আমার প্রতি ন্যায় বিচার করবে এবং আমি আমার চাকরি ফিরে পাবো।