বাংলায় নিবন্ধন, নিয়োগ পেলেন সমাজবিজ্ঞানে— এক যুগ ধরে পাচ্ছেন বেতন

অভিযুক্ত শিক্ষিকা সাজেদা বেগম, মাউশি ও এনটিআরসিএ’র লগো
অভিযুক্ত শিক্ষিকা সাজেদা বেগম, মাউশি ও এনটিআরসিএ’র লগো  © টিডিসি সম্পাদিত

নাম সাজেদা বেগম। কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা এইচ এম সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে কর্মরত আছেন তিনি। প্রায় একযুগ ধরে প্রতিমাসে পাচ্ছেন পদ অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সুবিধা। তবে সমাজ বিজ্ঞানে নিয়োগ হলেও এই শিক্ষিকার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক নিবন্ধন রয়েছে বাংলায়। আবার এনটিআরসিএর নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতাও পূরণ করনেনি সাজেদা বেগম। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলায় অনার্স কিংবা ৩০০ নাম্বারের বাংলা না পড়েও জালিয়াতি করে নেন এনটিআরসিএ সনদ। যোগ্যতা পূরণ না করেও বাংলায় নিবন্ধন পাস, তারপর সমাজবিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ এবং পরবর্তী এমপিও চালু করিয়ে নেন অনায়াসে। ভুয়া সার্টিফিকেট গহণের পর এই শিক্ষককে নিয়োগ দিতে সহায়তা করে জোয়ারিয়ানালা এইচ এম সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক। 

২০১৩ সালে মার্চের শুরুতে প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক স্বাক্ষরিত আবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর অনুরোধ করা হয় সাজেদা বেগমের নাম এমপিওভুক্ত করার। যদিও বিষয়টি নিয়ে দায় নিতে নারাজ প্রধান শিক্ষক  আজিজুল হক। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘আমি একা নিয়োগ বোর্ডে ছিলাম না, অন্য সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর সাজেদা বেগমকে যখন নিয়োগ দেয়া হয়, তখন নিবন্ধন পাওয়া সাবজেক্ট ছাড়া অন্য সাবজেক্টে নিয়োগ দেয়া যাবে না, এ ধরনের কোন নিয়ম ছিল কি-না আমার জানা নেই।’

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগে ফের শূন্যপদের তথ্য চেয়েছে এনটিআরসিএ

যদিও শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, নিবন্ধনের সত্যতার মতো বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব ম্যানেজিং কমিটির। এই শিক্ষকের নিবন্ধনের কাগজ ঘেঁটে দেখা গেছে, নিয়োগের বিষয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু এসব বিষয়ের দায় নিতে নারাজ প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, এনটিআরসির নিবন্ধন ভুয়া হলে সেটার দায় আমার নয়। আমি এ বিষয়ে জানি না।

‘মাউশি এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উভয় পক্ষের দায় রয়েছে এখানে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এ ধরনের ব্যক্তির সুপারিশ করতে পারেন না। সেখানে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা দেখতে হবে। তাছাড়া আগে এসব যাচাই-বাছাই স্ব শরীরে সম্পন্ন হতো। মাউশিতে যারা কাজ করতো তাদের সাথে কোন পদ্ধতিতে সমন্বয় হয়েছে বলা যাচ্ছে না। এখানে বড় জালিয়াতি হয়েছে— প্রফেসর ড. খান মাইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, পরিচালক (মাধ্যমিক), মাউশি

সাজেদা বেগমের এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট যাচাই করে দেখা যায়, তিনি ৮ম ব্যাচ থেকে ২০১২ সালে বাংলায় নিবন্ধন পেয়েছিলেন। যদিও তার নিয়োগ হয় সমাজ বিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষক হিসেবে। এছাড়াও তার ডিগ্রির রেজাল্ট ঘেটে দেখা গেছে, এই শিক্ষিকা ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের রামু কলেজ থেকে মানবিকে তৃতীয় বিভাগ পেয়ে পাস করেন। কিন্তু বাংলায় নিবন্ধন পেতে হলে ৩০০ নাম্বারের বাংলা বাংলা থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ। যেটি অভিযুক্ত এই শিক্ষকের নেই।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) এই নিবন্ধনধারীর সার্টিফিকেট পাওয়ার রহস্য জানতে চাইলে বিস্ময় প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষে’র (এনটিআরসিএ) সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘ডিগ্রি পাস কোর্স শেষ করে কারো বাংলায় নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব নয়। এটার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।’ এনটিআরসিএ সচিব আরও বলেন, ‘এটা অনেক আগের ঘটনা। পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেব। তবে আমি মনে করি, স্কুল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত।’

আরও পড়ুন: ভাঙল প্রকৌশল গুচ্ছ, তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত

বাংলায় নিবন্ধন নিয়ে সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষিকা সাজেদা বেগম বলেন, আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না৷ আপনি বিদ্যালয়ের সাথে কথা বলেন। তারাই আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। ডিগ্রি পাস কোর্সে পড়াশোনা করে এনটিআরসি থেকে কোন প্রক্রিয়ায় বাংলায় নিবন্ধন নিয়েছেন, জানতে চাইলে সাজেদা বেগম বলেন, আমি এখন বাইরে আছি।  এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না।

স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অবিভাবক ডাক্তার আবদুল মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা দীর্ঘদিন থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের অদক্ষতা বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আসছি। কিন্তু স্কুলটি সাবেক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী এবং দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমান প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম। এলাকার মানুষজন অভিযুক্ত শিক্ষিকার জাল সনদের বিষয়েও অবগত আছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমরা চাই, দ্রুত এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

জালিয়াতির প্রতিকারের বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর চট্রগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, এমন ঘটনা প্রতিকারের জন্য দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা দরকার। প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে এবং পরে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলে তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে। এরপরেও সমাধান না আসলে আমাদের কাছেও অভিযোগ দিতে পারে। তাহলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা নেব।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. খান মাইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, মাউশি এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উভয় পক্ষের দায় রয়েছে এখানে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এ ধরনের ব্যক্তির সুপারিশ করতে পারেন না। সেখানে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা দেখতে হবে। তাছাড়া আগে এসব যাচাই-বাছাই স্ব শরীরে সম্পন্ন হতো। মাউশিতে যারা কাজ করতো তাদের সাথে কোন পদ্ধতিতে সমন্বয় হয়েছে বলা যাচ্ছে না। এখানে বড় জালিয়াতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের পর এ পর্যন্ত অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। কেউ আমাদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোথায় দুর্নীতি করেছে এবং মাউশির দুর্বলতা কোথায় পুরো ব্যপারটি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence