‘এমপিও বাণিজ্য’সহ নানা অনিয়ম বন্ধ চান মতিঝিল মডেলের শিক্ষকরা

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এমপিওভুক্তির নামে ফান্ড গঠনসহ চলমান নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করে তা থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। সম্প্রতি ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো এক আবেদনে এ আর্জি জানান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষে এ আবেদন জানান।

এর আগে চলতি বছরের মে’র দিকে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অনিয়ম, নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ-বদলি, শিক্ষকদের হয়রানি, ছুটি না দেওয়াসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। তাতে রাজধানীর অন্যতম নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ শিক্ষালয়টির গভর্নিং বডির সভাপতি আবদুল মতিন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন সদস্য এবং অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান খানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ জানানো হয়েছিল।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদে থাকা আবদুল মতিন ভূঁইয়া। আর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান খান প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে।

আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেলে শিক্ষক নিয়োগের আগেই অনুমোদন-জালিয়াতি, ২৮ বছর পর মামলা

মতিঝিল মডেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধ্যক্ষ ও সভাপতি এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের নানা নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায়—শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের প্রত্যাশা করছেন।

রাজধানীর মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও বর্তমানে বাসাবোতে একটি শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজারের মতো। আর এসব শিক্ষার্থীকে পাঠদানে বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন ২৫০ জনের মতো শিক্ষাগুরু। এর মধ্যে কোনো রকম নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে ফান্ড গঠন করে এবার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মোট ৪১ জনের এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নতুন অধ্যক্ষের যোগদানের এক মাসের মধ্যেই শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতির একটি সিন্ডিকেট, তাতে রয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষকও। ইতিমধ্যে কয়েকজন শিক্ষকের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মিথ্যা অভিযোগও করা হয়েছে। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার চেয়ে চাকরি টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানসহ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম—জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন: ‘টাকা ছাড়া এমপিও হয় না’—মতিঝিল মডেল কর্তৃপক্ষের অডিও ফাঁস

সম্প্রতি করা আবেদনে জানানো হয়েছে, মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও প্রজেক্ট হাতে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান খান, সভাপতি আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য শাহজাহান মৃধা কচি, প্রভাবিত নির্বাচনের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি এনামুল হক, কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন শিক্ষককে দিয়ে বিভিন্নভাবে এমপিও প্রত্যাশী শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে অতি সংগোপনে টাকা সংগ্রহ করার পাশাপাশি ফলাও করে প্রচার করছেন টাকা লাগলে কমিটি দিবে অথবা শিক্ষকদের কাছ থেকে তুলে ফান্ড দেয়া হবে।

বর্তমানে দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের নিবন্ধনের (এমপিওভুক্তি) জন্য কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না উল্লেখ করে একই আবেদনে বলা হয়েছে, একজন সরকারি প্রেষণে আসা অধ্যক্ষ এহেন কাজের সাথে জড়িত থাকেন কি করে—তা আমাদের বোধগম্য নয়। বর্তমান অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান খান প্রেষণে আসার পর অভিষেক মিটিংয়ে এসে পরিচিত না হয়েই ৬ জন শিক্ষককে সমন্বয়ের কথা বলে সমন্বয় না করে সরাসরি বদলি করেন। এরপর ০৩ জন সিনিয়র শিক্ষককে থানায়, ডিবিতে নিয়ে হেনস্তা করার মাধ্যমে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেন।

এছাড়াও এসএসসি ২০২৩ এর ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালে অধ্যক্ষের অনুগত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিশেষ বাহিনী তৈরি করে অধিকাংশ পরীক্ষার হল থেকে জন প্রতি ৫০০-৮০০ টাকা করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মত হাতিয়ে নেন। তিনি এ নিয়ে প্রধান অভিযুক্ত কর্মচারী মো. রাজীব মিয়ার বিরুদ্ধে তিনি অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেননি। অধ্যক্ষ কলেজের নতুন ভর্তিকৃত ছাত্রীদের নবীনবরণসহ অ্যাকাডেমিক উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে কলেজের ভর্তিতে চরম ভরাডুবি হয়। এমনকি স্কুলের আসন্ন ভর্তির ব্যাপারেও বর্তমান অধ্যক্ষ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন বলেও জানানো হয়েছে আর্জিতে।

আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেলে শিক্ষার্থী নেমেছে অর্ধেকে, নেপথ্যে সিন্ডিকেট-অনিয়ম

মতিঝিল মডেলের শিক্ষকরা অভিযোগে বলেছেন, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা নির্বাচনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের কাছ থেকে রি-টেস্টের নামে বিষয় প্রতি ২০০ টাকা করে তুলেছেন, যা সম্পূর্ণরূপে আইন ও বিধি বহির্ভূত। পাশাপাশি ফরম পূরণের সাথে তিনি হিসাবের বাইরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫০০ করে টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছেন। এ ছাড়াও ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির মূল্যায়ন ফি’র নাম করে ৫০০ টাকা (জনপ্রতি) আদায় করেছেন—যা মাউশির নির্দেশনার প্রতি সুস্পষ্ট দৃষ্টতার শামিল। 

এছাড়া মতিঝিল মডেলের শিক্ষকরা অভিযোগ জানিয়েছেন, বিগত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে অধ্যক্ষের কক্ষে তার সামনে প্রতিষ্ঠানটির সংরক্ষিত মহিলা টিআর রোখসানা ইয়াসমিনকে হুমকি প্রদান করেন অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষক। তার এমপিও করা হবে না বলে—এমন হুমকির বিষয়ে একটি অভিযোগও জানানো রাজধানীর মতিঝিল মডেল থানায়।

মতিঝিল মডেলের অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান খান প্রেষণে এসেই এমপিও নীতিমালার বাইরে গিয়ে বয়সসীমা ৪০ রেখে প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন জানিয়ে অভিযোগে আরও জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দুরভিসন্ধিমূলক ভাবে গোপনীয় রাখা হয়। নিয়োগ পরীক্ষার দিন প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও তার অভিযুক্তরা তাদের পছন্দনীয় ১/২ জন শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের প্রবেশ করতে দেননি।

আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেল কেন্দ্রে ব্যবহারিক খাতায় নম্বর পেতে টাকা দিতে হলো শিক্ষার্থীদের 

এছাড়াও অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান প্রতিষ্ঠানে সভাপতি, বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও ২জন টি. আর এবং কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলেছে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা সংকটাপন্ন জানিয়ে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বোর্ড ও মাউশির কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বোর্ড এবং মাউশিতে পাঠানো অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই জানিয়েছেন মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আবদুল মতিন ভূঁইয়া। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যার নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়েছে—এমন নামে কোনো শিক্ষক মতিঝিল মডেলে নেই বলেও জানান তিনি। আর বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়গুলো তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence