ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৯:২২ AM , আপডেট: ১২ মে ২০২৫, ০৪:৩৪ AM
পেশাগত ন্যায্য অধিকার আদায়সহ তিন দফা দাবিতে রংপুরে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার (১১ মে) রংপুর নগরীর টাউন হলে শিক্ষক সমিতির আয়োজনে দিনব্যাপি এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নেতারা।
তাদের দাবি, বিগত সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০ সালের ১২ আগস্ট যে টাইম স্কেল সংক্রান্ত চিঠি জারি করা হয়, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও বিভ্রান্তিকর। এই চিঠি প্রত্যাহার করে ৫০ ভাগ কার্যকর চাকরিকাল বিবেচনায় যথাযথ জ্যেষ্ঠতা প্রদান ও বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করাই এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলের মাধ্যমে চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দিলো ছাত্রদল
সমাবেশে অংশ নিয়ে পঞ্চগড়ের মল্লিকাদাহ দক্ষিণ কুমারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হরি কৃষ্ণ রায় বলেন, ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম ধাপের ২২ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রধান শিক্ষককে গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের বাকি শিক্ষকসহ দ্বিতীয় ধাপের ২ হাজার ২৫২টি এবং তৃতীয় ধাপের ৯৬০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রধান শিক্ষক পদ স্থগিত রেখে ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষকেরা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার পর গেজেটে তিনি প্রধান শিক্ষক হননি। এ প্রসঙ্গে আব্দুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলাম। রক্ত মাংস পানি করে শিক্ষার পরিবেশ এনেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। অথচ জাতীয়করণে আমাকে প্রধান শিক্ষক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়ার প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দেবীগঞ্জের আলমপাড়া শিশু নিলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুভাষচন্দ্র সিংহ বলেন, টইম-স্কেলের ফলে আমাদের যে বেতন বৃদ্ধি হয়। তা অবসরভাতা থেকে কেটে নেওয়া হয়। এটা আমাদের সঙ্গে ধোকামী করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সংগঠনের মাধ্যমে হাইকোর্টে মামলা করলে আমাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু তবু আমরা পাচ্ছি না। তাই আন্দোলনে এসেছি।
আরও পড়ুন: জাতীয় পার্টিসহ আরও ১৪ দলকে নিষিদ্ধের দাবি
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা মামলায় রায় পেয়েছি। কিন্তু বিগত সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল চলমান রয়েছে। আমরা বারবার আবেদন, স্মারকলিপি প্রদান ও অপেক্ষার পরও সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষক অংশগ্রহণ করবেন। শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নও সম্ভব নয়। আমাদের দাবি না মানলে সমাবেশের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলফাজ আলমের সঞ্চালনায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে বিভাগীয় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আক্কাস আলী, মহাসচিব মো. খোন্দকার, দপ্তর সম্পাদক মোশারফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আজমল হোসেন,শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলাম ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক ওয়াহেদুল ইসলাম বকুল।