প্রাথমিকে আট হাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ

প্রাথমিকে আট হাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ
প্রাথমিকে আট হাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ  © সংগৃহীত

এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রাথমিক স্তরের প্রায় আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে প্রাথমিক স্তরের ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমে গিয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে (এপিএসসি) উঠে এসেছে।

করোনাকালে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের ক্ষতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশউপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০২২ সালে এপিএসসিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

কেন এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল? জানতে চাইলে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এটা আসলে করোনাকালীন সময়ে চিত্র। সে সময় কিন্ডারগার্ডেন টাইপের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ছিল না। ভাড়া বাড়িতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে। শিক্ষার্থী না থাকায় তাদের কোন উপার্জনও ছিল না। ফলে তারা চালাতে পারেনি। তবে কোনও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কিছু কিছু চালু হচ্ছে।

করোনাকালীন সময়ে যে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী চলে গিয়েছিল তারা কি আবার ফিরতে শুরু করেছে? জানতে চাইলে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন দুই বছর তো শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া বন্ধ ছিল। পাশাপাশি ‘মিড ডে মিল’ কর্মসূচিও বন্ধ ছিল। এগুলো আবার চালু হয়েছে।

‘‘আমরা দুই বছরের উপবৃত্তির টাকা একসঙ্গে পেয়েছি। ‘মিড ডে মিল' কর্মসূচি চালু হয়েছে। ঝড়ে পড়েছে বিষয়টি এমন না। এগুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রাইমারির অনেক শিক্ষার্থী কওমী মাদ্রাসায় চলে গিয়েছিল। এখন সেখান থেকে কিছু কিছু ফিরে আসছে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর বাইরে প্রাথমিকে আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি করা হয়। সে অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ১ লাখ ১৮ হাজারের কাছাকাছি।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতেও কাজ করছে সরকার: প্রতিমন্ত্রী

২০২২ সালের শুমারিতে এই সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে, মানে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর নেই। ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্যে দেখা গিয়েছিল, সে বছর কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে দেশে মোট ১৪ হাজার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমেছিল। কিন্ডারগার্ডেন জাতীয় বিদ্যালয়গুলোই মূলত কমছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাকালে যেসব খাতের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, তার মধ্যে একটি হলো শিক্ষা। করোনা সংক্রমণ শুরুর দুই বছর পর এখন সেই চিত্র উঠে আসছে।

তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে এক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে আট লাখের বেশি শিশু শিক্ষার্থী কমেছে। অথচ প্রতি বছর শিক্ষার্থী বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। সারা দেশে প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ের সংখ্যাও কমেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার হার নতুন রিপোর্টে একটু বদলাচ্ছে। ২০২২ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট আগামী ২৩ মে প্রকাশ করা হবে। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একটু বাড়ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী কওমী মাদ্রাসায় চলে গিয়েছিল, তারা আবার ফিরে আসছে। 

আসলে কি চলে যাওয়া শিক্ষার্থী ফিরে আসছে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি ফার্মগেইটের ইসলামিয়া সমিতি বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদুর রহমান বলেন, খুব বেশি ঝরে পড়েছিল, এমনটা বলা যাবে না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে গেছে। বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসায় বেশি গেছে। সেখান থেকে তাদের আনা যাচ্ছে না।

‘‘আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেকেই তাদের সন্তানকে পড়াতে চান না। তারা মনে করেন, আমার বাসার কাজের মেয়ে যে স্কুলে পড়ে, আমার সন্তানও একই স্কুলে পড়বে এটা তো হয় না। ফলে তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে নিয়ে যান। তবে যারা স্কুলে আসা বন্ধ করেছিল, তাদের কিছু কিছু ফিরছে।’’

অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে। কিন্তু শুমারিতে দেখা গেছে, এবার ঝরে পড়ার হার এক লাফে ৩ শতাংশ কমেছে। ঝরে পড়ার হার এখন ১৪.১৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৭.২০ শতাংশ। 

এর আগে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে করা প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল, ২০২১ সালে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী আগের বছরের তুলনায় ৬২ হাজার ১০৪ জন কমেছে। বর্তমানে দেশে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০ হাজার ২৯৪টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল দুই কোটি ১ লাখের বেশি। যা ২০১৮ সালে ছিল দুই কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার।

নতুন রিপোর্ট যেটা প্রকাশ হতে যাচ্ছে, সেখানে কি পড়ুয়া কমার হার কমেছে? প্রশ্ন ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলামের কাছে।

তিনি বলেন, আসলে পুরোপুরি ঝরে পড়েনি। যেটা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী অভাবে পড়েছে তাদের কওমী মাদ্রাসাগুলো থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সেখানে নিয়ে গেছে। এখন সেখান থেকে কিছু কিছু ফিরে আসছে। তবে সবাই আসছে না। তবে গ্রামাঞ্চলে কিছু পড়ুয়া ঝরে পড়েছে। তাদেরও ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সরকার কাজ করছে। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence