দক্ষিণ কোরিয়ায় রেকর্ড উচ্চতায় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১২ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১২ PM
দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চশিক্ষা খাতে নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০–তে পৌঁছেছে। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার।
এই প্রবৃদ্ধি মূলত সরকারের ‘স্টাডি কোরিয়া ৩০০কে’ কর্মসূচির ফল, যার লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখে উন্নীত করা এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিদেশে পড়াশোনার গন্তব্যের মধ্যে নিয়ে আসা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বছর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নির্ধারিত লক্ষ্য আমরা ছাড়িয়ে গেছি। এখন ২০২৭ সালের তিন লাখের লক্ষ্য অর্জন আমাদের নাগালের মধ্যে।’
মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার জন ডিগ্রিমুখী কোর্সে ভর্তি হয়েছেন, যা মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের তুলনায় এ হার ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে ভর্তি শিক্ষার্থী বেশি হলেও এর অনুপাত সামান্য কমে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) বিষয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে—গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীন রয়েছে শীর্ষে, ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর রয়েছে ভিয়েতনাম (২৯ দশমিক ৭ শতাংশ), উজবেকিস্তান (৬ দশমিক ২ শতাংশ) এবং মঙ্গোলিয়া (৬ শতাংশ)।
এখন আর বিদেশি শিক্ষার্থীরা শুধু রাজধানী সিউলকেন্দ্রিক নন। রাজধানীর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৩—মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এটি ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে উত্তর চুংচং প্রদেশে শিক্ষার্থী প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৩৭ জনে, আর উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ১০৯—যা ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এই অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সরকারের ‘রাইজ’ কর্মসূচি। স্থানীয় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে এই কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বৃত্তি ও শিক্ষার্থী আকর্ষণের নীতি তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২টি দেশে স্থাপিত কোরিয়ান এডুকেশন সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করেছে। ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানসহ ৯টি দেশে শিক্ষা মেলা, পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ও পরামর্শ সেবা চালু রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দ্রুত মানিয়ে নিতে সরকার কোরিয়ান ভাষা শেখার কোর্স সম্প্রসারণ করেছে এবং অনুমোদিত ভাষাকেন্দ্র বাড়িয়েছে। আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ভাষাজ্ঞান যাচাইয়ের মানদণ্ডও কঠোর করা হবে—বর্তমানে যেখানে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য এটি বাধ্যতামূলক, তা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে।
আঞ্চলিক ভিসা নীতির আওতায় বিভিন্ন শহর তাদের শিল্পক্ষেত্র অনুযায়ী ছাত্র ভিসা (D–2) নীতিমালা সংশোধন করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, বুসানে সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রিক ব্যাটারি বিষয়ক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারজুড়ে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন। গওয়াংজুতে এআই ও ভবিষ্যৎ পরিবহন প্রযুক্তিতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
সরকার STEM–ভিত্তিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বৃত্তি চালু করেছে। পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্থানীয় শিল্পখাতে সম্পৃক্ত করতে ‘কে–ওয়ার্ক’ নামের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরি মেলার আয়োজন করছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী চোই ইউন–ওক বলেন, ‘আমরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের যেন কোরিয়ান সমাজে স্থায়ীভাবে মানিয়ে নিতে পারে, সে জন্য মানসম্পন্ন সহায়তা ও তদারকি অব্যাহত রাখব।’ তিনি আরও জানান, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি এবং পড়াশোনার পর ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ বৃদ্ধিতেও ইতিমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে।’ [সূত্র: কোরিয়া হেরাল্ড]