বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইউরোপের সেরা ১০ স্কলারশিপ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:২৫ AM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:১৪ PM
উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভাবনার বিষয় থাকে স্বল্প খরচে দেশের বাইরে পড়াশোনা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন ইউরোপের ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। বিদেশে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে ইউরোপ বিভিন্ন দেশ। এর মূল কারণ হচ্ছে ইউরোপের শিক্ষার মান ও জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত। এছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার জন্য কোন প্রকার টিউশন ফি লাগে না।
রয়েছে ভ্রমণের সুযোগও। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয় নজরকড়া ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ইউরোপ মহাদেশ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এসব স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ধরনের ১০টি স্কলারশিপ নিয়ে এবারের আয়োজন।
১. আইফেল অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
এটি ফ্রান্স সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত বেশ জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীগণ ফ্রান্সের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়তে আসেন এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে।এই স্কলারশিপের আওতায় ১২ মাস থেকে ৩৬ মাস মেয়াদী মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও ১০ মাস মেয়াদী পিএইচডি কোর্সের অর্থায়ন করা হয়ে থাকে।
এই স্কলারশিপের আধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং, ল’, ম্যানেজমেন্ট, পলিটিক্যাল সাইন্স ও ইকোনোমিক্স পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। আইফেল অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম মাসিক ভাতা, রিটার্ন ট্রিপ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য বিমার খরচ কাভার করে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
২. সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ
২০১২ সাল পর্যন্ত বিনা টিউশন ফি-তে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ ছিল। এরপর থেকে সেখানে টিউশন ফি পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সুইডিশ ইনস্টিটিউট থেকে স্কলারশিপ পেলে কোনো ফান্ড ছাড়াই সুইডেনে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। সুইডেনে স্নাতকোত্তর করতে আগ্রহী হলে এই স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। সুইডিশ ইনস্টিটিউট থেকে প্রদত্ত স্কলারশিপ টিউশন ফি ছাড়াও জীবনযাত্রার ব্যয়, বিমা এবং ভ্রমণ খরচ কাভার করে। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশকিছু দেশের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে ক্লিক করুন
৩. সুইস গভর্নমেন্ট অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপ
সুইজারল্যান্ড সুইস গভর্নমেন্ট অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ দেয়। পোস্ট ডক্টরাল বা ডক্টরাল গবেষণা করার জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ স্কলারশিপে টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবিমাসহ নানা সুবিধা পান শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছর সুইস কনফেডারেশন সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য ১৮০ টিরও বেশি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিনিময় এবং গবেষণা সহযোগিতার প্রচারের জন্য গভর্নমেন্ট অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রদান করে। ফেডারেল কমিশন ফর স্কলারশিপ ফর ফরেন স্টুডেন্টস (এফসিএস) কর্তৃক স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডিধারী তরুণ গবেষকদের সুইস গভর্নমেন্ট অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। এটির মাধ্যমে টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, লোডিং ভাতা এবং স্বাস্থ্য বিমা পাওয়া যায়।
সুইস গভর্নমেন্ট অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপে আবেদনসহ বিস্তারিত তথ্য এখানে পাবেন শিক্ষার্থীরা।
৪. রোডস স্কলারশিপ
রোডস স্কলারশিপ একটি প্রাচীনতম এবং মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ। ১৯০২ সালে সিসিল জন রোডসের উইলের মাধ্যমে এই স্কলারশিপটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীদের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। রোডস স্কলারশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ, ব্যক্তিগত উপবৃত্তি, স্বাস্থ্য বিমা এবং বিমান ভাড়া কাভার করে।
রোডস স্কলারশিপের স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
৫. গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ
গেটস কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ২০০০ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস তাদের ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ যুক্তরাজ্যের বাইরের দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেওয়া হয়।
এই স্কলারশিপের আওতায় ক্যামব্রিজে পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ। সাথে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পোজিশন ফি, বিমান ভাড়া এবং ভিসা খরচ প্রদান করে থাকে। নন-ইউরোপিয়ান নাগরিকদের জন্য এই স্কলারশিপে মোট ৯০টি আসন রাখা হয়।
গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
৬. র্যাডবউড স্কলারশিপ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
র্যাডবউড স্কলারশিপ ইউনিভার্সিটি নিজমেগেনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য সম্পূর্ণ বা আংশিক স্কলারশিপ দেওয়া হয় র্যাউডবউড স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আংশিক খরচ মওকুফ ছাড়াও সম্পূর্ণ টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ মওকুফের সুবিধা রয়েছে। র্যা ডবউড স্কলারশিপ ভিসা, রেসিডেন্স পারমিট, স্বাস্থ্য বিমা এবং দায় বিমার মতো খরচও কভার করে।
র্যাডবউড স্কলারশিপ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
৭. ডেভেলপিং সলিউশন স্কলারশিপ
এই স্কলারশিপের আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, আফ্রিকা বা কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ডেভেলপিং সলিউশন স্কলারশিপ প্রতি বছর ১০৫টি বৃত্তি প্রদান করে থাকে। যার মধ্যে ৩০টি বৃত্তি সম্পূর্ণ টিউশন ফি এবং ৭৫টি অর্ধেক টিউশন ফি কভার করে।
নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের নটিংহামে অবস্থিত একটি সরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৮৮১ সালে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯৪৮ সালে রাজকীয় চার্টারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ করা হয়। নটিংহামের প্রধান ক্যাম্পাস (বিশ্ববিদ্যালয় পার্ক) ও টিচিং হাসপাতাল (কুইন্স মেডিক্যাল সেন্টার) নটিংহাম শহরের বহির্ভাগে অবস্থিত। নটিংহামশায়ার ও ডার্বিশায়ারে এর অসংখ্য ছোট ক্যাম্পাস ও সাইট রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাইরে মালয়েশিয়ার সেমেনিয়াহ ও চীনের নিংবোতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রয়েছে। নটিংহামে পাঁচটি অনুষদ রয়েছে, যার মধ্যে পঞ্চাশের অধিক বিদ্যালয়, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
ডেভেলপিং সলিউশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
৮. জার্মানির ড্যাড স্কলারশিপ
জার্মানির অন্যতম স্কলারশিপ হলো ডাড স্কলারশিপ। ডাড তাদের কার্যক্রম শুরু করে ১৯২৫ সালে। এই স্কলারশিপ প্রতিবছর প্রায় ১৫০,০০০ ছাত্রছাত্রীদের অর্থায়ন করে থাকে। যারা স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ডাড (DAAD) স্কলারশিপটি একটি দারুণ সুযোগ।দ্য জার্মানি একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ডাড স্কলারশিপ।
মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ স্কলারশিপে ১০ থেকে ১৪ মাস মেয়াদি মাস্টার্স বা পিএইচডি করা যায়। এ স্কলারশিপে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে অর্থায়ন করা হয়ে থাকে। টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি, মাসে ভাতা (পিএইচডি ১২০০ ইউরো, মাস্টার্স ৮৬১ ইউরো), উড়োজাহাজের জন্য টিকিট, স্বাস্থ্যবিমা, বাড়িভাড়া এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা আছে এ বৃত্তির আওতায়। এ
যারা আবেদন করতে পারবেন, ডাড (DAAD) স্কলারশিপের জন্য সাধারনত ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পি এইচ ডি, পোস্ট ডক্টোরাল ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারে।
ডাড স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
৯. ইতালি সরকারের বৃত্তি
ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ ইউরো খরচে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। সেখানে একটি স্কলারশিপ পেলে টিউশন ফি মওকুফের পাশাপাশি জীবনযাত্রার খরচের জোগান পাওয়া যাবে। ডিগ্রি কোর্স, পিএইচডি কোর্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্কলারশিপ দেয়। এসব সুবিধা ক্ষেত্রবিশেষে ৩, ৬ বা ৯ মাস মেয়াদের হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কলারশিপের মেয়াদ আরও বেশি হয়।
ইতালির স্টুডেন্ট স্কলারশিপ সম্পর্কে জানতে এ লিংকে বিস্তারিত তথ্য মিলবে।
১০. অস্ট্রিয়ায় হেলমুট ভেইথ স্কলারশিপ
হেলমুট ভেইথ স্কলারশিপে অস্ট্রিয়ায় পড়ার সুযোগ পান বিদেশি শিক্ষার্থীরা। দেশটির ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে এ বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ মিলবে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সম্পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রির জন্য টিউশন মওকুফ, বছরে ছয় হাজার ইউরোসহ নানা সুযোগ–সুবিধা মেলে এ বৃত্তিতে। হেলমুট ভেইথ স্কলারশিপের বিস্তারিত তথ্যর জন্য প্রবেশ করতে পারেন।