পশ্চিমবঙ্গের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার ফল

বাবা ঝালমুড়ি বিক্রেতা, প্রথম হয়েও চিন্তায় সরিফা

  © সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হল আজ সোমবার। রাজ্যে তিন ভাগে এই পরীক্ষা হয়— হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল। আজ দুপুরে তিনটি ভাগেরই মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে পর্ষদ। এর মধ্যে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম দশে রয়েছেন ১৫ জন। প্রথম হয়েছেন মালদহ জেলার এক ছাত্রী সরিফা খাতুন। সারিফার প্রাপ্ত নম্বর ৭৮৬।

পরীক্ষায় প্রথম হলেও আনন্দ করার দিনেও আনন্দ নেই সরিফার বাড়িতে। থাকবে কী করে? ঝালমুড়ি বিক্রেতার মেয়ে প্রথম হলেও টানাটানির সংসারে উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তা যে আনন্দকে চাপা দিয়ে দিচ্ছে।

লকডাউনে যখন স্কুল বন্ধ ছিল, পরীক্ষা হবে না বলে রব উঠেছিল, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তখন বাবাই উৎসাহ দিতেন। বাবা উজির আলির জন্যই হাই মাদ্রাসার পরীক্ষায় ভাল ফল করেছেন তিনি, রাজ্যে প্রথম হওয়ার খবর পেয়ে এমনটাই জানালেন মালদহের ছাত্রী সরিফা খাতুন। 

মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সরিফার বাবা-মা। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে তারা বুঝতে পারছেন না, এ বার কী করে পড়াশোনা চলবে। নিত্য অভাব যাতে ভবিষ্যতে তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে না-দাঁড়ায়, তার জন্য রেজাল্ট হাতে পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদনও করলেন সরিফা।

মালদহের রতুয়া থানার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে এ বার পরীক্ষা দিয়েছেন সরিফা। কিন্তু ছোট থেকে তিনি পড়াশোনা করেছেন ভাদো আবাসিক স্কুলে। সরিফা বলছেন, আমি জানতাম, এক থেকে দশের মধ্যে থাকব। শিক্ষকেরাও বলতেন, আমি ভাল ফল করব। কিন্তু প্রথম হব ভাবতে পারিনি। খবর পাওয়ার পর এখন দারুণ লাগছে।’’ সরিফা জানালেন, বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চান তিনি। কিন্তু অভাবের সংসারে এই স্বপ্নপূরণ কত দূর সম্ভব, তা ভেবে নিজেও চিন্তিত সরিফা।

পাড়ায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন সরিফার বাবা উজির। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা রোজগার, তাতে কোনও মতে চলে সরিফাদের সংসার। তবে যতই টানাটানি থাকুক, মেয়ের পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখেননি উজির। বাবাই তাঁকে সর্বক্ষণ উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে বলেই জানালেন সরিফা। তার কথায়, আমার আব্বু অত শিক্ষিত নয়। বাড়ির পাশে একটা দোকান খুলে এখন ঝালমুড়ি বেচে। কিন্তু আমার পড়াশোনায় কোনও বাধা আসতে দেয়নি। সব সময় আমায় উৎসাহ দিয়েছে। লকডাউনের সময় সবাই বলত, পরীক্ষা হবে না। তখন আব্বুই সব সময় আমায় পড়তে বসতে বলত।

মেয়ের সাফল্যে উজিরের বাড়িতে এখন খুশির হাওয়া। এ সবের মধ্যে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বেশ চিন্তিত দেখাল সরিফার মা সায়েতা বিবিকে। তাঁর এখন একটাই চিন্তা, এ বার মেয়ের পড়াশোনার খরচ সামলাবেন কী করে? সায়েতার কথায়, মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা সত্যিই আমাদের নেই। সরকার টাকা দিয়ে সাহায্য করলে তবেই মেয়ে আরও পড়তে পারবে।

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলেন সরিফাও। তিনি বলেন, আমার উচ্চশিক্ষার খরচ দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই বাবার। মু‌খ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, একটু সাহায্য পেলে খুবই সুবিধা হয়।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence