দেশসেরা বিজ্ঞানী বশেমুরকৃবি অধ্যাপক তোফাজ্জল

অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম
অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান লাভ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) মলিকুলার বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, গবেষক ও আইবিজিই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।

রবিবার এডি সাইন্টিফিক ইনডেক্স নামের আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা সারা বিশ্বের ২০৬ দেশের ১২টি ক্যাটাগরিতে ৫৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত লাখেরও বেশি বিজ্ঞানীর সাইটেশান এবং অন্যান্য ইনডেক্সের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশিত হয়।

র‌্যাংকিং করার ক্ষেত্রে বিশ্বের ৭ লাখ ৮ হাজার ৪৮০ জন, এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬২ জন, বাংলাদেশের ১ হাজার ৭৯১ জন এবং বশেমুরকৃবির সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরির ৪১ জন গবেষকের চলতি বছরসহ গত পাঁচ বছরের সাইটেশন বিবেচনায় নেয়া হয়।

এর মধ্যে গবেষক অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম সকল ক্যাটাগরিতে বশেমুরকৃবির মধ্যে ১ম, মলিকুলার বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের মধ্যে ১ম, এশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৩৬০তম এবং সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে ২৬৪৬তম স্থান লাভ করেছেন।

ড. তোফাজ্জল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি বিজ্ঞানী। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা জার্নালে তার ২৫০-এর অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গুগল স্কলারে তার বর্তমান সাইটেশনের সংখ্যা ৪৬৮৩। জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে তিনি দেড় শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া তার সম্পাদনে ২০টি বই ও ৪৫ টি অধ্যায় প্রকাশিত হয়। জিন এডিটিংয়ের ওপর অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম সম্পাদিত এবং স্প্রিঞ্জার নেচার প্রকাশিত সিরিজ বই ক্রিসপার-কাস মেথডস বিশ্বে একটি বেস্ট সেলার বই।

অধ্যাপক ইসলামের বেশিরভাগ মৌলিক গবেষণার অবদান কিছু শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং পর্যালোচনাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: মলিকুলার প্ল্যান্ট-মাইক্রোব্যাক ইন্টারেক্টেশন, ফলিত এবং পরিবেশগত মাইক্রোবায়োলজি, সেল গতিশীলতা এবং সাইটোস্কেলটন, কৃষি ও খাদ্য রসায়ন জার্নাল, ফাইটোকেমিস্ট্রি, ফাইটোপ্যাথোলজি, উদ্ভিদ এবং মাটি, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভিদ প্যাথলজি জৈব বিজ্ঞান, জৈব প্রযুক্তি এবং জৈব রসায়ন, জার্নাল কীটনাশক বিজ্ঞান, বেসিক মাইক্রোবায়োলজির জার্নাল, ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিস, জার্নাল অফ অ্যান্টিবায়োটিকস, জার্নাল অব জেনারেল প্ল্যান্ট প্যাথলজি ইত্যাদি।

অধ্যাপক ইসলাম বাংলাদেশে ওপেন অ্যান্ড ডিস্টেন্স লার্নিং (ওডিএল) এর অন্যতম পথিকৃৎ গবেষক। প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হিসাবে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।

প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ‘শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ শীর্ষক তার গবেষণা গ্রন্থটি পাঠক ও উচ্চমহলে প্রশংসা লাভ করেছে। সম্প্রতি, তিনি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জিম পিটারসন, ওখোয়া লি এবং ম্যাথিউ পিসিনেরির সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষায় কার্যকরভাবে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি কার্যকরভাবে একটি বইয়ের সহ-সম্পাদনা করেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া গমের ব্লাস্ট রোগের সমস্যা মোকাবিলায় ড. তোফাজ্জল ইসলাম অসামান্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। গমের ব্লাস্ট রোগটি প্রথম বাংলাদেশে উদ্ভূত হওয়ার পরে, বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগী দল ব্লাস্ট রোগটির ছত্রাকের জিনগত পরিচয় এবং উৎস শনাক্ত করেছে যেটি বিএমসি বায়োলজি জার্নালে ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়।

গমের ব্লাস্ট ছত্রাক সম্পর্কে আণবিক জৈবিক গবেষণা এবং বিস্ফোরণ প্রতিরোধী গমের জাতের বিকাশের মাধ্যমে ভয়াবহ গম বিস্ফোরণজনিত রোগ নিরাময়ের বিষয়ে তার গবেষণার ফলাফল চলমান। তিনি জিনোমিক্স এবং জিন এডিটিং ব্যবহার করে গমের ব্লাস্ট রোগ দ্রুত, সহজে এবং নিখুঁতভাবে নির্ণয়ে জীবপ্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়াও অধ্যাপক ইসলাম পাট ফাইবার থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের জন্য ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে, ন্যানোপেষ্টাইসাইডের বিকাশ এবং কৃষি ও পরিবেশগতভাবে মূল্যবান ম্যাসোপারস ন্যানোম্যাটরিয়ালস প্রস্তুতের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইউসুফ ইয়ামুচি এবং ডা. শাহরিয়ার হোসেনের সাথে গবেষণা সহযোগিতা করছেন।

তাদের ফলস্বরূপ সহযোগিতা ইতিমধ্যে বিখ্যাত নেচার কমিউনিকেশন জার্নাল এ ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক ইসলাম একটি স্প্রঞ্জার বই সিরিজ ব্যাসিলাস এবং অ্যাগ্রোবায়োটেকনোলজির প্রধান সম্পাদক। তিনি ফুলব্রাইট স্কলার হিসাবে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পানাক্যাসিওনের সাথে স্ট্রবেরি গাছের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি আণবিক ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের বিকাশে কাজ করেছিলেন।

অধ্যাপক ড.তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এডিএসআই র‍্যাংকিয়ে দেশ সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রথম হওয়া আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। এটি আমার গবেষণা কাজে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে একাডেমিক কাজের পাশাপাশি গবেষণা মূল লক্ষ্য থাকা উচিৎ। নতুন কিছু সৃষ্টি, নতুন কিছু জানার আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই। এজন্য সুযোগ পেলেই আমি গবেষণার পিছনে সময় দেই, গবেষণা করি এবং নতুন জ্ঞান সৃজনে বিভোর হই। আমি গবেষণা কাজ দারুণ উপভোগ করি।

তিনি আরও বলেন, আমার আজকের অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি। এরজন্য আমাকে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়েছে। আমি বশেমুরকৃবিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় একটি গবেষণা টিম নিয়ে কাজ করি। এখানে রয়েছে আমার সহকর্মী গবেষক, পোস্টডক, পিএইচডি, মাস্টার্স এবং স্নাতক পর্যায়ের তরুণ গবেষক। রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোলাবোরেটর।

এ অর্জনে তোফাজ্জল তার টিমকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় সমৃদ্ধি ঘটাতে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক বহুমাত্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তব্যে গবেষণায় জোর দেয়ার জন্য বলেছেন। বাংলাদেশে বিশ্বমানের গবেষণা করা সম্ভব তা আমি প্রমাণ করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence