মুমূর্ষু রোগীর পাশে রক্তদাতা তিতুমীরের ইলিয়াছ

মো. ইলিয়াছ
মো. ইলিয়াছ  © টিডিসি ফটো

‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’ এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে রক্তদানকে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াছ। ২৫ বছর বয়সে তিনি ছয়বার রক্ত এবং ৪৮ বার প্লাটিলেট দিয়েছেন, যা তাকে মানবতার মূর্ত প্রতীক করে তুলেছে। অসংখ্য মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচিয়ে তাদের পরিবারে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি।

শুধু নিজের রক্তদানেই থেমে থাকেননি ইলিয়াছ। বাঁধন, তিতুমীর কলেজ ইউনিটের সভাপতি হিসেবে তিনি নতুন রক্তদাতা তৈরি এবং মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। রক্তদান থেকে পাওয়া আত্মতৃপ্তি বারবার তাকে এই মহৎ কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। তার কাজ তরুণ শিক্ষার্থীদের মানবতার পথে এগিয়ে আসতেও উদ্বুদ্ধ করছে।

প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইলিয়াস বলেন, প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা সবসময়ই বিশেষ হয়। আমার প্রথম রক্তদান ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর, ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে আত্মতৃপ্তি, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বন্ধুরা উৎসাহ দিয়েছিল, আর সেই উৎসাহ থেকেই ভয় কাটিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত এক রোগীকে রাত ১১টার পর রক্ত দিয়েছিলাম। প্রথমবার রক্তদান করার সেই অভিজ্ঞতা আমাকে মানসিকভাবে অনেক সাহস জুগিয়েছে।

রক্তদান করতে গিয়ে শারীরিক চ্যালেঞ্জের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না হলেও মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, হাসপাতালের বেডে রক্তের অভাবে কষ্ট পেতে থাকা মানুষদের দেখলে দায়বদ্ধতা অনুভব হয়। একবার এক রোগীর জন্য প্লাটিলেট দিতে রাত ১১টা ৪০মিনিটে বাসা থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল মাত্র ৩০০ টাকা, যা সিএনজি ভাড়াতেই শেষ হয়ে যায়। রক্তদানের পর রোগীর ছেলে রক্তের ব্যাগ নিয়ে চলে গেলেও আমার ফেরার খরচ নিয়ে একটুও ভাবেনি। শেষ পর্যন্ত পরিচিতদের থেকে বিকাশে ধার করে বাসায় ফিরি।

ইলিয়াছ বলেন, প্রতিটি সুস্থ মানুষ ৪ মাস পরপর রক্ত দিতে পারে। যারা ভয় পান, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ—সরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে একবার ঘুরে আসুন। রক্তদানের সঠিক জ্ঞান অর্জন করলে ভয় কেটে যাবে।

রক্তদান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজে ইলিয়াছ যুক্ত আছেন বলে জানা যায়। বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজ করেন বলে জানান তিনি।

প্রথম দিকে পরিবার থেকে বাধা পেয়েছিলাম জানালেন তিনি। ইলিয়াছ জানান, মা-বাবা বেশ রাগ করেছিলেন। তবে কয়েকবার রক্তদানের পর তারাও উৎসাহ দেওয়া শুরু করেন। এখন আশপাশে কারো রক্ত প্রয়োজন হলে তারাই আমার নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

প্রতি বছর ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষ্যে হাসপাতাল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতেও ইলিয়াছ অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়। তিনি বলেন, আমার ১ ব্যাগ রক্ত শুধু একজন মানুষ নয়, একটি পরিবারের বাঁচার স্বপ্ন হতে পারে। এভাবেই রক্তদান সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

ইলিয়াছ বলেন, রক্তের বিনিময় হতে পারে না। এটি মানুষকে সহযোগিতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence