জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
চার পরীক্ষায় আটকে গেলো হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৫৯ PM , আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:১২ PM
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকী ছিলো স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের। আর একটি পরীক্ষা বাকী ছিলো ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সরকার গতকাল ১৪ দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এরপরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সব পরীক্ষা স্থগিত করে। এদিকে পরীক্ষা স্থগিত করার কারণে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
গত বছর ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয় ২০১৬-১৭ সেশনের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। ইতিমধ্যে ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকী তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা যথাক্রমে ২৩, ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। অর্থাৎ দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষা শেষে এই মাসেই শেষ হতো তাদের স্নাতক পরীক্ষা। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় তাদের অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হলো।
আরও পড়ুন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের খবরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
আক্ষেপ প্রকাশ করে চট্রগ্রাম কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, এইচএসসি পর বিদেশ চলে গেলে সেটাই ভালো হতো। তাহলে আজকে আর এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতোনা। এতদিনে মাস্টার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু এখনো অনার্সই শেষ করতে পারলামনা। আর মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকী ছিলো। পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিলে কি এমন ক্ষতি হতো?
এদিকে গতকাল জাতীয় বিশ্ববদ্যালয় সকল পরীক্ষা স্থগিত করলেও আজকেই শেষ পরীক্ষা ছিলো ডিগ্রির। পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে জানতে পারে তাদের আজকে পরীক্ষা হবেনা। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। চলমান পরীক্ষা হঠাৎ করেই স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা৷
কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাওসার হোসেন বলেন, আমরা এমনিতেই ভয়াবহ সেশনজটে আছি৷ আজ শেষ পরীক্ষা থাকলেও কেন্দ্রে এসে জানতে পারি পরীক্ষা স্থগিত৷ আমাদের সাথে এমন প্রহসন কেন৷ আজকের পরীক্ষা নিলে কি হতো।
আরও পড়ুন- শিক্ষকদের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করল শিক্ষার্থীরা
২০১৯-২০ সেশনের মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের কণ্ঠেও ঝরছে আক্ষেপের সুর। ২০১৯ সালে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েও এখনো শেষ করতে পারেননি। এক বছরের কোর্স তিন বছরে গড়ালো। তাও কবে শেষ করতে পারবে তারও কোন ঠিক নেই। ফেনী সরকারি কলেজের মো. আফসার বলেন, কয়দিন আগে ফরম পূরণ হলো। ভেবেছি খুব শীঘ্রই এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো। এ জীবনে বোধহয় আর মাস্টার্স পাশ করা হবেনা। গত তিন বছর ধরে আটকে আছি একই জায়গায়।
ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যপক মো. শাহ আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাগুলো চলমান রাখা প্রয়োজন ছিল। অনার্স ৪র্থ বর্ষের ৩টি, ডিগ্রির একটি পরীক্ষা বাকী ছিল। আর অনার্স ১ম বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা এ মাসেই হতো। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে এসব পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম হটকারি সিদ্ধান্ত অভিভাবক ও সচেতন মহল অনেক উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল বলে মনে হচ্ছে।
বাকি যে কয়েকটি কোর্সের পরীক্ষা থেকে গেছে সেগুলোর জন্য আরও কয়েকটি দিন সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধসহ বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।