প্রাণীদের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে সেতু বানালেন জবির ২ শিক্ষার্থী

কৃত্রিম সেতু পার হচ্ছে একটি কাঠবিড়ালি
কৃত্রিম সেতু পার হচ্ছে একটি কাঠবিড়ালি  © ফাইল ছবি

সিলেট অঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের চলাচলের জন্য কৃত্রিম সেতু বানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই শিক্ষার্থী। মূলত বনাঞ্চলের ভেতরে সড়ক বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে বানর-হনুমান জাতীয় প্রাণীদের রক্ষা করবে ওই সেতু।

ওই শিক্ষার্থীরা হলেন জবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের (৬ষ্ঠ ব্যাচ) শিক্ষার্থী হাসান আল রাজী চয়ন ও একই বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের (১২তম ব্যাচের) মারজান মারিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মান দাতা সংস্থার আর্থায়নে সাতছড়ি বনে বিশেষ তিনটি কৃত্রিম সেতু নির্মাণ করেছেন ওই গবেষক দম্পতি। সম্প্রতি তারা বাংলাদেশে নতুন ব্যাঙের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে আলোচিত হয়েছেন।

ব্রিজ নির্মাণকারী গবেষকরা জানান, সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হওয়া বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রধান হুমকিগুলোর মধ্যে একটি। বৈশ্বিক উন্নয়ন যেমন মানব সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে এই উন্নয়ন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য। বিশ্বব্যাপী বনাঞ্চলকে ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। ফলে বনের একদিক থেকে অন্যদিকে বিচরণের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এমন ঘটনা বাড়ছে। 

গবেষক হাসান আল রাজী বলেন, ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করি। ওই সময় বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের সাতছড়ি ও লাউয়াছড়া বনে প্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা পাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে এমন আরো বন আছে, যেগুলোর মধ্য দিয়ে মহাসড়ক এবং বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। সেখানেও যদি কৃত্রিম ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তবে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু সংখ্যা কমানো সম্ভব। যা এ দেশের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এতে দেখা যায়, ২০১৫-১৭ পর্যন্ত সাতছড়ি বনে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি এবং লাউয়াছড়াতে ১৩টি প্রাইমেট সড়ক দুর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা যায়। তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে আর্ন্তজাতিক জার্নাল ‘জুলজিয়া’তে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। এরপরই কাজ শুরু করি প্রকল্পটি নিয়ে। গবেষণাপত্রটিতে উঠে আসে, দুর্ঘটনায় প্রাণীদের মৃত্যুর মধ্যে লম্বালেজী হনুমানেদের সংখ্যা বেশি।  

গবেষকরা বলছেন, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল সিলেটের সাতছড়ি বনের রাস্তার পাশের গাছগুলোতে কৃত্রিম ব্রিজ তৈরি করে চলাচলের সংযোগ করে দেওয়া। যাতে প্রাণীরা নিরাপদে পারাপার হতে পারে। প্রকল্প পরিচালনায় আর্থিক সহায়তায় করে ‘এক্সপ্লোরার ক্লাব’ নামের আমেরিকান এবং পামপলরিস ই. ভি. নামে জার্মানভিত্তিক দাতা সংস্থা। যারা বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজে অর্থায়ন করে থাকে। 

গবেষক মারজান মারিয়া বলেন, ব্রিজ নির্মাণে আমরা বনবিভাগের সহায়তায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করি। ২০২০ সালের ১ নভেম্বরে ব্রিজগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হয় এবং তিনমাস অপেক্ষা করি, যাতে বন্যপ্রাণীরা ব্রিজটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। তিনমাস পর বন্যপ্রাণীর চলাচল পর্যবেক্ষণে ব্রিজের একপাশে একটি করে ক্যামেরা ট্র্যাপিং স্থাপন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দু’সপ্তাহ পর পর ক্যামেরা ট্র্যাপিং থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাতছড়ি বনে সরেজমিনে যাই। ইতোমধ্যেই আমরা বেশকিছু বন্যপ্রাণী চলাচলের ছবি পেয়েছি। যাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, হনুমান এবং বিভিন্ন ইঁদুরগোত্রীয় প্রাণী।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence