ডেঙ্গুতে ইডেন ছাত্রীর মৃত্যু, বান্ধবীর হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৪ PM , আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৪১ PM
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রোববার মারা যান ইডেন কলেজের একাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা আক্তার শান্তা। পরিবার থেকে শুরু করে শান্তার বন্ধু মহল শান্তার এমন অকাল চলে যাও মেনে নিতে পারছে না। সোমবার (৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে শান্তার বান্ধবী শারমিন হক বন্যা শান্তাকে নিয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। নিচে স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল।
ফাতেমা বেগম শান্তা, অফিসিয়ালি নাম এটাই ছিল তোর। ভুলে তোর নামে আক্তারের জায়গায় বেগম দেয়া হইছিল, খুব রাগাইতাম তোরে এই বেগম ছিল বলে, তুই শুধু হাসতি আবার মুখ ভেঙ্গাইতি আচ্ছা তুই কি জানতি তোর ভেংচি কাটা খুব ফানি ছিল?
আমি তোর ভেংচি কাটা দেখে খুব মজা পেতাম, আবার তোর সামনে সেটা কপি করে দেখাতাম।
তুই যখন আমার নিকনেম হটবুড়ি দিয়েছিল, আমি রেগে সেটা রিমুভ করেছিলাম। তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলি তাই না? তুই কি জানিস আমার দেয়া নিকনেম টা এখনো দেখি কিন্তু তোর আইডির পাশে আর সবুজবাতি জ্বলে না।
তোর সাথে শেষ দেখা হয় শনিবার রাতে সাড়ে ১০টায় । তুই আইসিইউ তে ছিলি, তোর জ্ঞান ছিলো । নার্স জিজ্ঞেস করেছিল শান্তা বলোতো ও তোমার কি হয়? তুই চিনতে পেরেছিলি আর বলেছিলি আমার ফ্রেন্ড হয়। তারপর তুই ও কান্না করতেছিলি আর আমিও তোর সাথে গাধীর মতো কান্না করতেছিলাম।
তুই তখন তোর মুখের অক্সিজেন খুলে বলছিলি তোর অনেক কষ্ট হয়। তখন আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিল। কিছু না বলে কান্না করতে করতে বের হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস কর দোস্ত একবারের জন্য ও বুঝতে পারি নি যে এটাই শেষ কথা তোর সাথে। নয়তো আরো কিছুক্ষণ তোর সাথে কথা বলতাম। শেষবারের মতো তোরে একটু ছুঁয়ে দেখতাম।
আচ্ছা তুই কেন গেলি আমাদের একা করে? কাল না ফ্রেন্ডশিপ ডে ছিল? এই ছিল তোর দেয়া গিফট?
আচ্ছা আমাদের চেষ্টায় কি ঘাটতি ছিল খুব? বিশ্বাস করবি, আমার পক্ষ থেকে আমি কোন ঘাটতি রাখি নি। আমি কাল ও ভাবতেছিলাম যে তুই সুস্থ হইলে এগুলো কি মনে রাখবি যে? আমার রাগ বেশি থাকলেও, তোরে বকা দিলেও, তোর জন্য খারাপ লাগা টা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। জানিস খুব কষ্ট লাগে, এতো কিছু করেও তোরে বাচাঁতে পারলাম না।
আচ্ছা আমি কি ব্যর্থ? নাকি তোর সাথে রাগ করি বলে,বকা দেই বলে ইচ্ছে করে ছেড়ে চলে গেলি?
কেন সবাইকে এভাবে কাঁদায়া গেলি? প্রতিদিন সকালে তোদের বাসার নিচে যেয়ে শান্তা বলে আমি কারে ডাক দিব? কারে বলবো পড়াগুলো দিতে? কার খাতা নিব? তুই তো চলে গেলি আল্লাহর কাছে, কিন্তু কেন এতো স্মৃতি রেখে গেলি? আমাদের শাস্তি দেয়ার জন্য?
তুই খুব ভালো ছিলি রে, তুই এমন একটা মেয়ে ছিলি যারে হাজার বকা দিলেও রাগ করতি না।
তুই এমন মেয়ে ছিলি যে এক ওয়াক্ত নামাজও মিস দিতি না। এতো বাধ্যগত শান্তা কে আমরা কই পাবো? যাওয়ার আগে একটু বলে যেতি? তোর সব ইচ্ছে গুলো পূরণ হওয়ার আগেই কেন চলে গেলি?
জানিস দুইদিন ধরে ঘুমের ঘোরে শুধু তোরেই ভাবি। ভাবি তুই ফোন দিয়ে বলবি শারমিন কাল সকালে কখন যাবি কলেজে?
কিন্তু তোর নাম্বার তো বন্ধ। হয়তো এই দুনিয়ায় আর দেখা হবে না,কথা হবে না। কিন্তু ঠিকই ঐ দুনিয়ায় তোর সাথে দেখা হবে, সেদিন তোরে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করবো আর মনের মধ্যে জমানো সব কথা বলবো।
তোরে খুব মিস করি, একটু পর পর মনে হয় জীবন থেকে কি যেন হারিয়ে ফেললাম। তুই জানিস বুকটা ফেটে যায় তোর কথা মনে পড়লে। আচ্ছা শান্তা সত্যি করে বল তো, তুই কি আমার আর্তনাদ শুনতেছিস?