লাল কাফনের প্রতীকী লাশ রেখে ইবিতে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রতীকী লাশ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রতীকী লাশ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে লাল কাফনে মুড়িয়ে প্রতীকী লাশ রেখে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হত্যার ১৫৩ দিন পার হলেও এখনো খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এমন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় প্রশাসন ভবনের সামনে রক্তমাখা কাফন বিছিয়ে দড়ি দিয়ে আংশিকভাবে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদী কাগজে লেখা হয়, ‘সাজিদ হত্যার দায় মাথায় নিয়ে প্রশাসনিক ভবন চালাচ্ছি’।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রশাসনের ইচ্ছা ও আগ্রহ নেই বলেই আজ আমাদের ভাইয়ের হত্যার ১৫৩ দিন পার হলেও তার বিচার হয়নি। আজ প্রশাসন ভবনের সামনে যে প্রতীকী লাশ শুয়ে আছে, সেটাই তার প্রমাণ। প্রশাসন হয়তো জানে না এই বিষয়টিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে। তারা একটি লোক দেখানো গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে নামমাত্র কাজ করাচ্ছে। যদি আপনারা না পারেন, তাহলে এই দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিন। আমাদের মতো শিক্ষার্থীরাই এই খুনিদের বের করতে পারবে। রাত তিনটার দিকে কে ভ্যান নিয়ে ঢুকতে পারে, কে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করতে পারে—এসব সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা খুব কঠিন নয়।’

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আপনারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, যিনি এই বিষয় দেখাশোনা করেন, তার সঙ্গে বসুন। তাকে বলুন, আমাদের এক শিক্ষার্থীর হত্যার পাঁচ মাস হয়ে গেছে, কিন্তু তদন্তাধীন সংস্থাগুলো কিছুই বের করতে পারেনি। একটি ডেটলাইন দিন। সেই ডেটলাইনের মধ্যে যদি তারা কিছু করতে না পারে, তাহলে তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করুন। এমন বার্তা দিতে পারলে আমরা মনে করব প্রশাসন সচেতন এবং তারাও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। যদি প্রশাসন বিচার করতে না পারে, আজকে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী লাশ নিয়ে এসেছে—আগামী দিনে প্রশাসন ভবন বন্ধ করে দিতে শিক্ষার্থীরা কুণ্ঠাবোধ করবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রতীকী লাশ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট বলেন, ‘প্রশাসন এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি সাজিদ আবদুল্লাহকে কারা হত্যা করেছে। আজ আমি এই জায়গা থেকে দুটি দাবি জানাই। প্রথমত, যারা এখন পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত করছেন, তাদের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই—তাই আমরা চাই তাদের দ্রুত পরিবর্তন করে অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, প্রশাসন যদি সাজিদ হত্যার বিচার চায়, তাহলে এত দিন তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। যদি প্রশাসন এখনো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা না করে থাকে, তাহলে আমি মনে করি তারা যে চেয়ারে বসে আছে সেই চেয়ারে বসার অধিকার হারিয়েছে। আর যদি দেখা করার পরও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিছু করতে না পারেন, তাহলে তাকেও এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।’

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘সাজিদ আবদুল্লাহর হত্যার এত দিন পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডি আমাদের সঙ্গে নাটক করছে। দফায় দফায় ১৫ দিন পরপর সিআইডি প্রক্টর অফিসে এসে আমাদের সামনে গল্প পড়ে শোনায়। এতদিন আমরা সিআইডির নাটক দেখেছি, এবার আমরা এই নাটক মঞ্চ ভেঙে দিতে চাই। ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন কী ভাবছে? কুষ্টিয়া অঞ্চলে দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা হয় এই বাস্তবতা সবাই জানে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আপনাদের বিদায় জানাতে বাধ্য হব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চা করতে গেলেও নানা বাধা দেওয়া হয়। আমরা জানি না তারা কোন অদৃশ্য শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা মুক্তচিন্তা ও মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চা করবে, আমরা তাদের পাশে আছি। সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার দ্রুত বিচার না হলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence