জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রদলের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ৮, বিএনপিপন্থী শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর

আহত একজন,  বিএনপিপন্থী শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর ও ক্যাম্পাসে উত্তেজনা
আহত একজন, বিএনপিপন্থী শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর ও ক্যাম্পাসে উত্তেজনা  © টিডিসি সম্পাদিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বাসেত গ্রুপ ও সুমন সরদারের গ্রুপ জড়িত ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জবি সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনের কক্ষের সামনে সমঝোতা সভা চলাকালীন মোট তিন দফায় এই সংঘর্ষ হয়। এতে বিএনপিপন্থী ওই শিক্ষকের কক্ষের গ্লাস ভেঙে যায়।

জানা যায়, গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) আস-সুন্নাহ বাসে মার্কেটিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের সামিউদ্দিন সাজিদ ও তার কয়েকজন বন্ধু কথা বলছিলেন। এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একই ব্যাচের সাদী তাদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাদী সাজিদকে মেরে দ্বিতীয় গেটে ঝুলিয়ে রাখার এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর ওইদিন দ্বিতীয় গেটে এবং হলে গিয়েও সাজিদের খোঁজ নেন সাদী।

জানা গেছে, মার্কেটিং বিভাগের সামিউদ্দীন সাজিদ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জিয়া উদ্দিন বাসেতের অনুসারী। এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সুমন সর্দারের অনুসারী।

ঘটনার একদিন পর আজ দুপুরে দ্বিতীয় গেটে সাজিদের বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তাকে ডাকতে থাকে সাদী, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাসফিক, বাংলা বিভাগের আশরাফুল ও ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরাফাত। এরা সবাই ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বাক সুমন সর্দারের অনুসারী। 

এরপর সাদীর সঙ্গে থাকা রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী অতর্কিত হামলা করেন সাজিদের উপর। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদীসহ ১৫-২০ জন সাজিদের বন্ধু আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম ও জাহিদের উপর অতর্কিত হামলা করে। 

জানা যায়, ভুক্তভোগী সাজিদ কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের রাজনীতি করেন ও তার অনুসারী। অভিযুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদী সুমন সরদারের অনুসারী। এছাড়া ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য মাশফিক রাইন, আতাউল্লাহ আহাদ ও বাংলা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম সুমন সরদারের অনুসারী। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী সাজিদ ২য় গেটের সামনে ছাত্রদলের বাসেত গ্রুপের একজন নেতার সঙ্গে কথা বলছিল। পেছন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সুমন সরদার গ্রুপের কয়েকজন সাজিদকে ডাক দেয়। মূহুর্তেই মারতে শুরু করে সাজিদকে ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাকর্মী ঠেকাতে গেলে তোয়াক্কা না করেই মার্কেটিং বিভাগের সাজিদ, আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম ও জাহিদের ওপর হামলা করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, সাজিদকে যারা মেরেছে, সেখানে আমার সংগঠনের সদস্য ছিল। তাদের আমি থামাতে গিয়েছি। ভেবেছি তাঁরা হয়তো আমাকে চিনবে। কিন্তু তাঁরা আমার সামনেই সাজিদকে হামলা করে। ওদের আচরণভঙ্গি এমন, ছিল যে— আমরাই সন্ত্রাস। আমাদের যা ইচ্ছা, আমরা করবো। 

জানা যায়, ২য় ধাপে শান্ত চত্বরে আবার মারামারি হয়। চেয়ার দিয়ে সাদী ও শাহারুল ভুক্তভোগী আলামিনের মুখে হামলা করে। সেখানে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল উপস্থিত ছিলেন। পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দু'পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করেন। এদিন দফায় দফায় এই মারামারি ঠেকাতে গিয়ে জুনিয়র নেতাকর্মীদের দ্বারা হেনস্তা হন ছাত্র দলের আহ্বায়কসহ কয়েকজন সিনিয়র। 

এঘটনার সমঝোতার জন্য নিয়ে আসা হয় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড মো রইছ উদ্দিনের কক্ষে। এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদীকে নিয়ে আসার সময় তৃতীয় দফায় আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় জনি, রাব্বীসহ আরও কয়েকজন আহত হন।

এসময় দুপক্ষ আবার মারামারিতে জড়ান এবং ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের গ্লাস ভেঙে যায়। ঘটনার সময় মারামারি নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সহকারী প্রক্টর ফেরদৌস হাসান ও নঈম সিদ্দিকি আহত হন। তাদের শরীরে রক্ত দেখা যায়। এদিন মারামারি ঠেকাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন পরিবহন প্রশাসন ড.তারেক বিন আতিক। তার পাঞ্জাবিতে রক্ত মাখা ছিলো।

এ ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের মারধরের শিকার হওয়া সামিউদ্দিন সাজিদ বলেন, গতকাল আস সুন্নাহ'র বাসে সকাল ৭টার দিকে বাসে কথা বলছিলাম। সাদী আমাদের ধমক দিয়ে কথা বলে। বলে, "তোরে মেরে সেকেন্ড গেটে ঝুলিয়ে রাখবো। তোর নাম, ডিপার্টমেন্ট বল। তোকে সেকেন্ড গেটে ঝুলাবো দেখবি। দেখে নিবো তোরে। বাসের ২০-২৫ সবাই সাক্ষী। সে আমাকে কালকে হলেও খুঁজতে গেছে। আজকে ১৫-২০ জনসহ আল-আমিন, প্রত্যয়, সাকিব, ইব্রাহিমের উপর অতর্কিত হামলা করে। আমাদের তিনজনকে মারে। এর আগে গতকাল হলে গিয়েও আমার বিষয়ে খোঁজ নিছে।

ভুক্তভোগী মার্কেটিং বিভাগের জাহিদ হাসান জনি বলেন, সিনিয়ররা আমাদের আটকায়ছে। আর জুনিয়ররা আমাদের মেরেছে। আহত হওয়া আরেক শিক্ষার্থী আলামিন বলেন, আমার মুখে এমন ভাবে হামলা করছে, মুখ ফুলে গেছে। যে চেয়ার দিয়ে মারছে, সেটা ভেঙে গেছে।

তবে দফায় দফায় দুই গ্রুপের এসংঘর্ষ হলেও ছাত্রদল এটিকে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারি বলে দায় এড়াতে চায়। এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্র দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক  সুমন সরদার বলেন, এটা আস-সুন্নাহ হলের বাসের একটি ঘটনায় দুই বিভাগের শিক্ষার্থীেদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত না।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। আমরা দুই পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করেছি। আমরা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বসে সমঝোতা করেছি।

এ ঘটনায় হেনস্তার শিকার একজন শিক্ষক বলেন, আমি হেনস্তার শিকার। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই বিভাগের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। পরবর্তীতে ঘটনা বড় হয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে যায়। গ্রুপিংয়ের কারণে অন্যরা মারামারিতে জড়িয়েছে। তদন্ত কমিটি হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ