নারী প্রার্থী সংকটের সম্ভাবনা আসন্ন জকসু নির্বাচনে
- জুনায়েদ মাসুদ, জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৪ PM
আসন্ন নভেম্বরে ২৭ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জকসু) নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীরা এই প্রথম পাচ্ছে নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুযোগ, ক্যাম্পাসজুড়ে তাই শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা ও প্রস্তুতি। তবে উৎসবমুখর এই পরিবেশের আড়ালে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ছাত্ররাজনীতিতে নারী শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ ও প্রার্থী সংকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের মনোনয়ন প্রস্তুতিতে পুরুষদের সরব উপস্থিতি থাকলেও, নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়ছেনা বললেই চলে। উপযুক্ত নারী পার্থী খুজে পাচ্ছেননা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কিংবা আপ বাংলাদেশ, কোনো সংগঠনই সক্রিয় নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি। কেবল ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কমিটিতে দুই-তিনজন নারীর নাম থাকলেও তারা সংগঠনের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। তবে শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ না থাকার মূল কারণ তাদের অনাগ্রহ, যা তৈরি হয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, বহুদলীয় কোন্দল ও নেতৃত্ব কাঠামোয় নারী শিক্ষার্থীদের স্থান না থাকার কারণে।
একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, এখন ক্যাম্পাসে রাজনীতি মানেই সংঘর্ষ, হুমকি বা দ্বন্দ্ব। এই পরিবেশে মেয়েরা অংশ নিতে ভয় পায়। তাছাড়া কোনো দলের কমিটিতেই মেয়েদের তেমন জায়গা নেই।
গত জুলাইয়ের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময়ও আন্দোলনের নেতৃত্বে নারী শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। সেই সময়ের পর থেকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ কমতে ক্রমশ কমেছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরিবেশ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও, নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন বড় বাধা। অনেক সময় রাজনৈতিক মত প্রকাশ বা সংগঠনিক সম্পৃক্ততা দেখলেই নারীরা অনলাইন বুলিং, হ্যারাসমেন্ট ও শ্লাটশেমিংয়ের শিকার হন।
আরেকজন ছাত্রী বলেন, কেউ যদি কোনো পোস্টে মত দেয় বা আন্দোলনের ছবি দেয়, সঙ্গে সঙ্গে নানা মন্তব্য শুরু হয়। এতে অনেকে বিব্রত হয় এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকে।
জুলাই অভ্যুত্থানে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করা জবির লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সর্ণা রিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সত্যিকার অর্থে মেয়েরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমি নিজেও জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সবকিছু থেকে লিভ নিয়েছিলাম। নিজের কাছে পরিচিত ছাড়া সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। চেয়েছিলাম পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে। কারণ ওটাই আমার শেষ সম্বল। তাছাড়া নারীদের ব্যাপারে নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতো আছেই। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও সেটা দেখেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিল থেকে তাল বানানো হয় চরিত্র হননের জন্য। এসবের পরিবার ও সমাজের কাছে লজ্জিত হতে হয়। তারা সত্যিটা জানেনা। যেটা দেখে সেটাই বিশ্বাস করে।
এই অনলাইন সংস্কৃতি নারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক। তাঁর ভাষায়, নারীরা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হলে তাদের চরিত্র বা পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়। এটি এক ধরনের সামাজিক শাস্তি, যা তাদের স্বাভাবিক অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিব বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমরা একই সাথে আন্দোলন করেছি। ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এরপর দফায় দফায় পলিটিকাল আরগুমেন্টগুলো হয়েছে। যেগুলো নারীদের নিরুৎসাহিত করেছে। দ্বিতীয়ত, বড় বড় রাজনৈতিক যে দলগুলো রয়েছে তাদের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার জায়গাতে গ্যাপ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি। তবে দূর্বলতা থাকতে পারে। এবারের জকসু নির্বাচনে আমরা একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল করার চেষ্টা করবো। ৫০-৫০ হারে না হলেও ৬০-৪০ হারে প্যানেল গঠিত হবে।
এদিকে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জানান, তাদের প্যানেলে নারী শিক্ষার্থী থাকবেন। কিন্তু কত শতাংশ থাকবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। শাখা ছাত্রদলের প্যানেলের বিষয়েও বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
ছাত্ররাজনীতিতে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, কোন ধরনের বুলিং হ্যারাসমেন্ট কিংবা থ্রেট আছে বলে মনে করি না। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা। নিজ থেকে উদ্যোগী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সামগ্রিক পরিবেশ তাদের অনুকূলেই।