এম এম কলেজ লাইব্রেরি

৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৮৫ আসন, সিট পেতে ভোর থেকে লাইন

সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরি
সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরি  © টিডিসি ফটো

যশোরের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে (এম এম কলেজ) ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৮৫ আসনের একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ আধুনিক পাঠাগারে বসে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ভোরে লাইনে দাঁড়াতে হয়। লাইনে নির্ধারিত ৮৫ জনের বেশি হলে বাকিদের ফিরে যেতে হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই বড় পরিসরের লাইব্রেরির দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালে কলেজটির নাম ছিল যশোর কলেজ। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান ১৯৪৫ সালে যশোরের কৃতী সন্তান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে নামকরণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে মিত্রবাহিনী কলেজে ঘাঁটি স্থাপন করলে তখন হাটবাড়ীয়ার জমিদারের কাছারিবাড়িতে (বর্তমানে ফায়ার ব্রিগেড অফিস, ভোলা ট্যাংক রোড) কলেজ সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে পুনরায় পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তখন থেকেই এটি ‘সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ’ নামে পরিচিত।

বর্তমানে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে মোট ২০টি বিভাগ—এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদে ৬টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ৪টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৩টি, কলা অনুষদে ৬টি এবং আইসিটি বিভাগ রয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন মাত্র ৮৫টি।

লাইব্রেরিটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ছাত্রীদের জন্য সময় সীমাবদ্ধ, বিকেল ৫টার পর তারা লাইব্রেরিতে অবস্থান করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকে বলছেন, এত অল্প আসনের লাইব্রেরিতে জায়গা পেতে হলে প্রতিদিন খুব সকালে বাসা থেকে বের হতে হয়। লাইব্রেরির সামনে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে সিট দখল করতে হয়।

লাইব্রেরির ডিজিটাল পাঠকক্ষে বসে পড়াশুনা করছিলেন মাস্টার্সের (রসায়ন) শিক্ষার্থী নোমান আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে নিয়মিত আসি। লাইব্রেরি প্রয়োজন অনুযায়ী রেফারেন্স বই রয়েছে। ডিপার্টমেন্টের জন্যে যেসব বই দরকার, এখানে পাই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোটা পাঠকেন্দ্র। কোনো কোলাহল নেই, পড়াশুনার জন্যে চমৎকার পরিবেশ রয়েছে। একটাই সমস্যা মনে হয়েছে আমার কাছে এখানে পাঠ্যসূচির বাইরে পর্যাপ্ত গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ কিংবা কবিতার বই নেই। তবে, সবচেয়ে বৃহৎ সমস্যা পর্যাপ্ত আসন ব্যবস্থা নেই। লাইব্রেরিতে আসন ধরার জন্য ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হতে হয়। আসন সংখ্যা বাড়ানো বা লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধি অত্যান্ত জরুরি। 

লাইব্রেরিতে বসে বিভিন্ন রেফারেন্স বই দেখছিলেন ইংরেজি বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুমা আক্তার সিঁথি। তিনি জানান, বিষয়ভিত্তিক (কলেজের পাঠ্যপুস্তক) বই যা আছে, পর্যাপ্তই বলা চলে। মেয়েদের জন্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, এখানে আমরা থাকতে পারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে, ছেলেরা রাত ৯টা পর্যন্ত থাকতে পারেন। মেয়েদের জন্যে সময়সীমা বাড়ানো হলে ভালো হয়। পড়াশুনার জন্যে চমৎকার পরিবেশ বলেও জানান তিনি। সিঁথি আরো বলেন, মেয়েদের নামাজের জন্যে একটা ব্যবস্থা থাকলে খুব ভালো হতো। কেননা কলেজ মসজিদে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা নেই।

সময়-সুযোগ পেলে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করেন বলে জানান দ্বাদশ (বিজ্ঞান) শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিস ইকবাল সনেট। তিনি বলেন, এখানকার পরিবশে বেশ শান্ত। পড়াশোনার জন্যে খুব ভালো। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এসে দেখা  যায়, বসার কোনো চেয়ার ফাঁকা নেই। মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখানে কিছু আসন বাড়ালে ভালো হতো শিক্ষার্থীর তুলনায় আসন সংখ্যা খুবই কম।

লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের তুলনায় চেয়ারের সংখ্যা বেশ কম বলে জানান ইংরেজি সাহিত্যের আরও এক শিক্ষার্থী তানজিব আহমেদ। এখানে ৮৫ শিক্ষার্থী একসঙ্গে বসতে পারে। অনেক সময় বসার জায়গা পাওয়া যায় না। অনেকেই ফিরে যায়। আসন বাড়িয়ে একটি বড় লাইব্রেরির প্রয়োজন। তাহলে কলেজের অনেকে এখানে পড়ার সুযোগ পেতেন। আসন ধরার জন্য খুবই সকালে আসতে হয়।

বাংলা শেষবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, পড়াশুনার পরিবেশ খুব ভালো।  কিন্তু লোডশেডিং হলে পুরো লাইব্রেরি অন্ধকার হয়ে যায়। তখন এখানে একমুহূর্ত অবস্থান করা যায় না। আমাদের দাবি, অন্তত একটি জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হোক। যাতে তাৎক্ষণিক আমরা পাঠের সুযোগ নিতে পারি।

কলেজের লাইব্রেরিয়ান আক্তার হোসেন বলেন, মাত্র ৮৫ টি আসনের পরিকল্পনা নিয়েই লাইব্রেরিটি করা হয়েছে। আসন সংকটের জন্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয়। সিটে বসার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয়। খুবই সকালে কলেজে আসতে হয়। যারা দেরি করে আসেন তাদের ফেরত যেতে হয়। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের ঘাটতি নেই। একাধিক রেফারেন্স বইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা নিয়মিত লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করেন নিসন্দেহে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো করবে। তাদের জানার পরিধিও বৃদ্ধি পাবে। 

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে লাইব্রেরিটি সিডিপি প্রকল্পের প্ল্যান অনুযায়ী ও তাদের অর্থায়নে করা। সেখানে জেনারেটর সংযোজন কিংবা বসার জন্যে আরো বেশি ব্যবস্থা করা- এমন বিষয় এই মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না। নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ হবেন খুব শিগগিরই। উনি এসে আসন বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ