বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ বছরেও হয়নি সমাবর্তন, হতাশ সাবেক শিক্ষার্থীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি

দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি), যার ১৪ বছর পূর্ণ হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ১৪ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজও তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে স্নাতক সম্পন্ন করে ঐতিহ্যবাহী কালো গ্রাউন পরিধান করে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠার মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজন করা কথা থাকলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ‘সোনার হরিণে’ পরিণত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, কিন্তু সমাবর্তনের আয়োজন নিয়ে এখনো কোনো সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর ফলে, স্নাতক শেষ করে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন তাঁদের শিক্ষাজীবনের একটি মাইলফলক সম্পন্ন করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত, অন্যদিকে তারা সনদ পেতে বিশেষ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানালে রাষ্ট্রপতি সেই সমাবর্তনে থাকার  আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তা আর আশার মুখ দেখিনি।

এখনো পর্যন্ত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়াই প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ জানান, সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদের পরিবর্তে সাময়িক সনদ দিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও মূল সনদ না পাওয়ায় বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্যও অনেককেই পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে৷ তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং উদ্যোগহীনতার কারণেই আয়োজন হচ্ছেনা সমাবর্তন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ খাজা আহমেদ বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি কয়েক বছর আগে, কিন্তু এখনো সমাবর্তন হয়নি এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের পরিশ্রম ও স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। এই সমাবর্তনের অনুপস্থিতি আমাদের মধ্যে এক ধরনের অপূর্ণতা তৈরি করেছে। তাছাড়া, মূল সনদ না পাওয়ায় অনেক সময় চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়, যেখানে প্রোভিশনাল সনদ যথেষ্ট নয়।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, অনতিবিলম্বে সমাবর্তন আয়োজনের জন্য একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্মৃতিকে স্বযত্নে ধরে রাখতে কাঙ্ক্ষিত একটি মুহূর্ত হলো সমাবর্তন। এটা শুধু সনদপ্রাপ্তির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নয়। বরং কালো গ্রাউন, চারকোণা টুপি গর্ব আর অনুপ্রেরণার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাজীবনে সমাবর্তনের অভিপ্রায় থেকে পুনরায় মিলিত হোক প্রাণে প্রাণে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, চার বছর পড়াশোনার শেষে সকল শিক্ষার্থী সমাবর্তনের আশায় থাকেন। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।


সর্বশেষ সংবাদ