ডাকসু নির্বাচন
সব শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবে তো?
- আল মামুন
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:০৯ AM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:৩৫ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। নির্বাচনী তফসিল, প্রার্থীর বয়স নির্ধারণ ও ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবন না-কি হল অফিস— এমন সব বিতর্কের মধ্যেই এবার ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়া’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন।
তারা বলছেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আর প্রতিটি হলে ভোটার রয়েছে প্রায় দুই হাজার। যেহেতু নির্বাচনে প্রতিটি ভোটারকে কেন্দ্র ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৩৮টি (ডাকসু ২৫ এবং হল সংসদ ১৩) ভোট দিতে হবে। তাই প্রত্যেক ভোটারের জন্য কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ মিনিট সময় প্রয়োজন। সে হিসেবে হলে এক বা একাধিক বুথ হলেও মাত্র ৬ঘন্টায় (সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা) সব ভোট কাউন্ট করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে অন্তত ১৫টি বুথের। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন- হলগুলোতে এতগুলো বুথ বসানো সম্ভব কি-না?
অবশ্য চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। পরিবেশ পরিষদ কমিটি রয়েছে; তারা কাজ করছেন। ভোট প্রদান করতে কারো যেন অসুবিধা না হয়, সেভাবেই আয়োজন চলছে।
ছাত্র সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, হলের মধ্যে ভোটকেন্দ্র হলে এতোগুলো বুথ বসানো সম্ভব হবে না। বসালেও ভোটকেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এতে করে সব ভোটার ঠিকমতো ভোট দিতে পারবে না। হলে ভোট কেন্দ্র ও অধিক সংখ্যক বুথ করা হলে সে পরিমাণ জায়গা এবং পরিবেশ আছে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, হলের মধ্যে যে পরিবেশ আছে; সেই পরিবেশে ১৫ থেকে ১৮টি বুথ বসানো সম্ভব না। কারণ, অধিকাংশ কক্ষগুলোই লাইব্রেরী, খেলাধুলার কক্ষ বা বিভিন্ন সংগঠনের অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমরা এসব বিষয়ে আগে থেকে চিন্তা করেছি। এজন্য হলের ভেতরে ভোট কেন্দ্র না করার দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ভোটকেন্দ্রগুলো একাডেমিক ভবনে করা হোক। কেননা হলে ভোট কেন্দ্র করতে হলে একটা পরিবেশ দরকার। অনেকগুলো বুথের প্রয়োজন।
অন্যদিকে নির্বাচনে অন্যতম শক্তিশালী প্যানেল ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা হল ছাড়া। সপ্তাহখানে ধরে মধুর ক্যান্টিনে বসলেও নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণার কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। হলে গিয়ে সেটি কতটুকু করতে পারবেন সেটি নিয়ে এখনো সন্দিহান। তাছাড়া হলে স্থাপিত বুথে কতটা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন— শঙ্কা রয়েছে সেটি নিয়েও।
ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় হল সংসদের কক্ষগুলোর অধিকাংশ বেদখলে। এসব কক্ষগুলোর কোনটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের দখলে, আবার কোনটি তালাবদ্ধ। এই অবস্থায় যদি নির্বাচন হয় তবে বুথ নিয়ে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি হলে প্রায় দুই হাজারের বেশি ছাত্র থাকে। এজন্য কমপক্ষে ২০টি বুথের প্রয়োজন হবে। কিন্তু স্বল্প জায়গার মধ্যে এতোগুলো বুথ বসানো কীভাবে সম্ভব? এজন্য আমরা আগে থেকেই হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছিলাম।
ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে, হলে নেই। সেখানে সহাবস্থানের পরিবেশও তৈরি হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থায়ী সহাবস্থান হবে এবং ছাত্র রাজনীতির নতুন যুগের সূচনা হবে এটি আমরা প্রত্যাশা করি। সঙ্গে সঙ্গে শুধু ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহাবস্থান, এটিকে আমরা বিশ্বাস করি না।
বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ যে এম শফিউল আলম ভূইয়া বলেন, ডাকসুর ঐতিহ্য হচ্ছে হলে ভোট কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে হলে যতগুলো বুথের প্রয়োজন সব করা হবে। বর্তমান পরিবেশ অনুযায়ী হলে বুথ করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, হলের মূল গেইট থেকে ভেতর পর্যন্ত কেন্দ্র ধরা হবে। এর ভেতরে যারা প্রবেশ করবে তারা নির্ধারিত সময়ের বাইরেও ভোট দিতে পারবে। যতক্ষণ শেষ না হবে ততক্ষণ ভোট গ্রহণ চলতে থাকবে। প্রয়োজনে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
প্রসঙ্গত, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ১১ মার্চ সকাল ৮টা হতে অপরাহ্ণ ২টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট হলের ভোটার (আবাসিক ও অনাবাসিক) তার নিজ হলের ভোট কেন্দ্রে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট প্রদান করবে। ভোট গ্রহণের পর ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।