বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে সংহতি জানালেন শিক্ষকরা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের। ইনসেটে- ভিসি শুচিতা শারমিন
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের। ইনসেটে- ভিসি শুচিতা শারমিন  © টিডিসি ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এবার সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা গত এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই আন্দোলনে শিক্ষকদের সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এখন এটি এক নতুন মোড় নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, “২০২৪ সালের গৌরবময় জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা আশা করেছিলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি নতুন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব পরিবেশে উত্তরণের পথে যাত্রা করবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা বরং দেখছি, একাধিক বিভাগে মাত্র দুই বা তিনজন শিক্ষক কর্মরত থাকা সত্ত্বেও গত আট মাসে কোনো নিয়োগ হয়নি। ফলে শিক্ষাদান কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ ভিসি ঢাকায় নির্বিকারভাবে সময় কাটাচ্ছেন এবং বেআইনি উপায়ে নিম্নপদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন।”

তাঁরা অভিযোগ করেন, এইসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নথিপত্র ট্রেজারার অনুমোদন না করায়, ভিসি নিজে এককভাবে স্বাক্ষর দিয়ে এসব নিয়োগ কার্যকর করছেন ও বেতন-ভাতা প্রদান করছেন—যা পুরোপুরি বেআইনি। ভিসির অনুপস্থিতি ও দায়িত্বহীনতার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষকদের বক্তব্যে বলা হয়, “সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা তিনি ক্যাম্পাসে থাকেন, বাকিটা সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব পালনের সুযোগও দেন না। একাডেমিক প্রস্তাবগুলো মাসের পর মাস তাঁর টেবিলে পড়ে থাকে। এমনকি, ক্যান্সারে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীর সাহায্যের আবেদন মাসের পর মাস খোলাই হয়নি, এবং ছাত্রটি মৃত্যুবরণ করেছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিসির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি বা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং তিনি যে দুটি দিভিকেট সভা আয়োজন করেছেন, তার একটি ছিল ‘গোপন এজেন্ডা’র দুরভিসন্ধিমূলক সভা এবং অপরটি ছিল একটি বিশেষ সুবিধাভোগী সভা। এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো আটকে আছে। আইনবহির্ভূতভাবে শিক্ষক প্রতিনিধি এপসারণ করে, নিজের পছন্দমতো লোকজনকে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত করে তিনি একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ব্যয়েও চরম অদক্ষতার অভিযোগ এনে বলা হয়, “২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বছর শেষে এসে মাত্র ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা গেছে। ৫০ লাখ টাকার বইয়ের বাজেট থেকেও কোনো বই কেনা হয়নি।”

শিক্ষকদের দাবি, ছাত্রদের ন্যায্য দাবির প্রতি ভিসি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বরং একের পর এক মামলা, সাধারণ ডায়েরি করে তাদের দমন করছেন। এই দমননীতি বিশ্ববিদ্যালয়কে এক ভয়াবহ অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তারা বলেন, “গৌরবময় অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ভিসি এখন উল্টো স্বৈরাচারী সরকারের অনুগতদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন। এমনকি বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারে থাকা ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কমিটিতে বসানো হয়েছে। আর যারা অতীতে নিরপেক্ষ ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের অপসারণ করা হচ্ছে।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence