বাকৃবি শিক্ষার্থীকে বারবার বহিষ্কারের অভিযোগ, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে বারবার বহিষ্কার ও শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল ফিস্ট অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের এক শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

পরে কোনো আপিল ছাড়াই সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার পরের দিন তাকে আবার হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এদিকে প্রশাসনের এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেছেন শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান চলছিল। গানগুলোও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই বাজিয়েছিলেন। আমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম। গান বাজানোর ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরও হল প্রভোস্ট ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমাকে হেনস্তা করার জন্য এসব কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন : অবৈধ ভারতীয়দের শিকল বেঁধে ফেরত : যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আলাপ

হল প্রভোস্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে আমার সুসস্পর্ক রয়েছে। এদিকে ছাত্রদলের আরেক নেতা শাহজালাল হলে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় আছেন। এ কারণেই হল থেকে সরানোর জন্য এমন কাজ করেছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান। বারবার এভাবে শাস্তি দেওয়া ও শাস্তি পাল্টানোর ঘটনাকে প্রশাসনের অন্যায্য ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন,  হলের অনুষ্ঠানে গান বাজাচ্ছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগের গান বাজানোর ওই ঘটনায় কেন তাহলে একমাত্র আমাকেই শাস্তি দেওয়া হলো?

প্রশাসনিক নথিপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বিধি' অনুযায়ী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুই সেমিস্টারের (১২ মাস) জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে গতকাল (৫ ফেব্রুয়ারি) শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক আবেদন ছাড়াই ওই শাস্তির আদেশ বাতিল করে নোটিশ জারি করা হয়। এরপর আবার বৃহস্পতিবার তাকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়।

শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এখানে প্রশাসনিক কিছু ত্রুটি ছিল। হলভিত্তিক সমস্যায় প্রাধ্যক্ষই সবকিছু নির্ধারণ করেন। এ কারণেই প্রথমে শিক্ষার্থীকে একাডেমিক বহিষ্কার করা হলেও পরে সেটি বাতিল করা হয়েছে। হল প্রভোস্ট পরে তার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন।’

আরও পড়ুন : ববি উপ-উপাচার্যের নোটিশ বিধি বহির্ভূত বলে উপাচার্যের পাল্টা নোটিশ

অভিযোগ বিষয়ে শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ওই গানটি বাজাচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে প্রথমে তার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি কিছুটা কমিয়ে তাকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রথম বর্ষের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’

এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার হলের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ কেন থাকবে? এ রকম হলে তার শাস্তি কমানোর বিষয়ে আমরা ভাবতাম ই না।’

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাকৃবির শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি ফিস্টে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে চরম অস্তিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয় এবং কেউ ইচ্ছে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা সে সময় প্রশাসনকে বলেন তারা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গান বাজিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ