আড়াই লাখ টাকা বাকি রেখে লাপাত্তা বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও এক শিক্ষক

বেরোবি ক্যাম্পাসসংলগ্ন টি স্টল এবং শিক্ষক মশিয়ার রহমানের একটি দোকানে বাকির হিসাব
বেরোবি ক্যাম্পাসসংলগ্ন টি স্টল এবং শিক্ষক মশিয়ার রহমানের একটি দোকানে বাকির হিসাব  © সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী লীগপন্থী এক শিক্ষক বিভিন্ন খাবার দোকান, ভাতের হোটেল, ডেকোরেশন ও চায়ের দোকানে বাকি রেখে যাচ্ছিলেন। অনেক সময় আগের বাকি টাকা চাইলে নেতাকর্মীরা জোর করে খেয়ে যেতেন। আবার এমনও হয়েছে, যে কর্মীরা খেয়ে নেতার নাম করে চলে গেছেন। পরে টাকা চেয়ে আর পাওয়া যায়নি। কথাগুলো রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসসংলগ্ন আবু সাঈদ চত্বরের (পার্কের মোড়) কয়েকজন দোকানির।

তারা বলছেন, প্রায় আড়াই লাখ টাকা বাকি খেয়েছেন বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং এক শিক্ষক। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ হত্যায় জড়িতরাও আছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তারা পলাতক। ফলে দোকানদাররা পাওনা টাকা পেতে খুঁজছেন তাদের। তবে তাদের না পেয়ে মাথায় হাত দোকানিদের। নেতারা ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ায় এ টাকা আদায় করা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। এ তালিকায় রয়েছে সাবেক অনেক নেতাকর্মীর নামও।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তারা পলাতক। ফলে দোকানদাররা পাওনা টাকা পেতে খুঁজছেন তাদের। তবে তাদের না পেয়ে মাথায় হাত দোকানিদের। নেতারা ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ায় এ টাকা আদায় করা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

জানা গেছে, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক মশিয়ার রহমান মশিউরের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন আবু সাঈদ চত্বরের দোকানগুলোতে ৭৬ হাজার ৮৭৭ টাকা বাকি রেখেছেন। এর মধ্যে মারিয়াম প্লাজার এক দোকানে ৪০ হাজার ৪৫০, লিফা স্টোরে ৪ হাজার ৬৩০, শাহ আলম টি এন্ড কফি হাউসে ৫ হাজার ৩৭৭, মাহবুব মাল্টিমিডিয়ায় ১ হাজার ৪২০ এবং চকবাজারের রুম্মান জেনারেল স্টোরে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। 

এ ছাড়া ভাই বোন টি স্টোরে ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ৯ হাজার ৮৩৫ এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম ৮ হাজার ১৯৫ টাকাসহ ১৮ হাজার ৩০ টাকা বাকি খেয়েছেন। সিনহা হোটেলে ছাত্রলীগ সভাপতি ৬৫০ এবং সাধারণ সম্পাদক ৫৫০, মামুন সবুজ ১ হাজার ৩০০, বাঁধন ৫৫০, আক্তার ১ হাজার ২৯৫, আরিফ ২ হাজার, আল আমিন ৪ হাজার ৬৮৩ এবং শুভ ১ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ১২ হাজার ৫২৮ টাকা  বাকি রেখেছেন।

আনোয়ার হোসেন হোটেল এড রেস্টুরেন্ট থেকে কনক ২ হাজার ৬৫৫ টাকা এবং পলক চাকমা ৭৭৫ টাকাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বাকি ১১ হাজার ৯০৫ টাকা। শাহ আলম টি অ্যান্ড কফি হাউসে তুষার কিবরিয়া ৫৩ হাজার ১১৯ এবং পোমেল বড়ুয়ার ৬ হাজার ৭৩৮ টাকাসহ ৫৯ হাজার ৮৫৭ টাকার বাকি রয়েছে। ঢাকা তেহারী হাউসে সিটন ১ হাজার ৪৮০ টাকার বাকি খেয়েছেন। 

জয়া ডেকোরেশনের দোকান থেকে সাবেক নেতা মাহমুদ ৪ হাজার ৫০০ এবং সাইফুল ২ হাজার ২০০ টাকাসহ মোট ৬ হাজার ৭০০ টাকা বাকি রেখেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছোট ছোট চা স্টলগুলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো পাবেন বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিং ম্যানেজার জুয়েল কার কাছে কত টাকা পাবেন তা বলতে পারেননি। তবে বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং ম্যানেজার দৌলত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের কাছে ৫২ হাজার টাকা পাবেন বলে জানান।

আরো পড়ুন: ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে শঙ্কা

দোকানিরা বলছেন, তারা বার বার কল দিচ্ছেন টাকার জন্য। কিন্তু টাকা দেব দেব বলেও দেয় না। অনেকেই কল ধরছে না। আবার অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ। তাদের টাকা ফেরত দিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তারা।

জয়া ডেকোরেশনের মালিক জয়নাল বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের ডেকোরেশন ভাড়া নিয়ে ভাড়া কম দিতেন বাবুল মিয়া। বাকি টাকার জন্য বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খুঁজছেন দোকানিরা। অনুষ্ঠান হলে চাঁদা দিতে হতো। আমার বকেয়া টাকা এখনো পাইনি।’ তিনিসহ দোকানিদের ভাষ্য, এ অবস্থার কারণে তাদের ব্যবসার অবস্থা সংকটাপন্ন। তারা তাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মী ও শিক্ষকের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দায়িত্বে বহাল থাকা একমাত্র ব্যক্তি রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে এখনও কোনও দোকানির অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে বিষয়টি দেখা হবে। তবে এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরের হলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হতো।’


সর্বশেষ সংবাদ