বেরোবির ১৩ খাতে অনিয়মের তথ্য পেয়েছে ইউজিসি
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫০ AM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫০ AM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ১৩টি খাতে অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি খাতে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে আর্থিক অনিয়মের এ তথ্য পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশন কিছু বিষয়ে ক্ষতি হওয়া টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা বলেছে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল ইউজিসির বাজেট পরীক্ষক দল বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট পরীক্ষাকালে অনিয়মের এ চিত্র পেয়েছে। সম্প্রতি এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ইউজিসি। কমিশন বলছে, অনুমোদন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব গেস্টহাউস না করে রংপুর ও ঢাকায় দুটি গেস্টহাউস ভাড়া নেওয়ার মাধ্যমে নিয়মের ব্যত্যয় ও আর্থিক ক্ষতি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন কার্যকরের সময় বিধিবহির্ভূতভাবে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে ইউজিসির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় পৌনে ৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন কার্যকর করার সময় একটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই ইতিপূর্বে দেওয়া অতিরিক্ত টাকা সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দিতে হবে।
শিক্ষাসফরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত যানবাহনের মাধ্যমে শিক্ষাসফরে পাঠানো হয়। তাদের শিক্ষাসফরকালীন দৈনিক ব্যয় থোক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বাহ করা হয়। তাই আলাদা করে টিএ-ডিএ (ভ্রমণভাতা ও দৈনিক ভাতা) দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের থোক হিসেবে টাকা দেওয়া হলেও শিক্ষকদের আবারও টিএ-ডিএ দেওয়া হয়।
ছয়টি খাতে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে আর্থিক অনিয়মের এ তথ্য পেয়েছে ইউজিসি। কমিশন কিছু বিষয়ে ক্ষতি হওয়া টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা বলেছে
এখানে টিএ-ডিএ খাতে বরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একাডেমিক বা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে দিয়ে রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে বলে ইউজিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। নিয়মানুযায়ী দায়িত্ব ভাতা মাসে দেড় হাজার টাকা করে নেওয়ার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোন ভাতা হিসেবে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের মাসে এক হাজার টাকা করে, সহকারী অধ্যাপকদের ৬০০ টাকা এবং প্রভাষক ও শাখা কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত গ্রেডের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মোবাইল ভাতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু তা দিয়ে রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে।
সব শিক্ষক-কর্মকর্তার মোবাইল ফোন ভাতা দেওয়ার নিয়ম নেই, কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদেরও মোবাইল ভাতা দেওয়া হয়। এভাবে বছরে ১৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা দিয়ে সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ও রাজস্বের ক্ষতি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে থাকার জন্য সরকার নির্ধারিত নিয়ম না মেনে বর্গফুট হিসাবে বাড়ি ভাড়া কাটা হয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে, যার বার্ষিক পরিমাণ ৭৫ লাখ টাকার বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসা ছোট হওয়ার অজুহাতে এখানে বর্গফুট হিসাব করে বাড়ি ভাড়া কাটা হয়। অথচ এলাকাভেদে সরকারি বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত হারে টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে ইউজিসি বলছে, উচ্চ গ্রেডধারীদের এসব বাসা বরাদ্দ না দিয়ে তা যাঁদের প্রাপ্য, তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া এবং নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি ভাড়ার সম্পূর্ণ অংশ কাটার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
আরো পড়ুন: ভুয়া বিলে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, ইবির ৮ প্রকৌশলীকে দুদকে তলব
জনবলকাঠামোর বাইরের কোনো পদে পদোন্নতি (পদোন্নয়ন) দেওয়া যায় না। কিন্তু ইউজিসির বাজেট দল দেখতে পেয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ হিসাবরক্ষক, জ্যেষ্ঠ ক্যাটালগার, জ্যেষ্ঠ কম্পিউটার অপারেটর, জ্যেষ্ঠ ভান্ডাররক্ষক, উপাচার্যের জ্যেষ্ঠ একান্ত সহকারী-২ ছাড়াও বেশ কিছু পদ জনবলকাঠামোভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মের ব্যত্যয়। এ জন্য জনবলকাঠামো অনুযায়ী কর্মরতদের সংশ্লিষ্ট উচ্চতর পদে পদোন্নয়ন নীতিমালা সংশোধন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইউজিসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মজিব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কাগজ আমার কাছে নেই।’