টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
গেস্টরুমে যেতে না চাওয়ায় জুনিয়রদের কক্ষে ঢুকে পেটালেন সিনিয়ররা
- বুটেক্স প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৬:১২ PM , আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ০৬:২৮ PM
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কক্ষে ঢুকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গেস্টরুমে যেতে অস্বীকৃতি জানালে কক্ষের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন ৪৬তম ব্যাচের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। অবশ্য পরে জানতে চাইলে মারধরের ঘটনা স্বীকারও করেছেন তারা। এ ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে হল প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ৬০১ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। জুনিয়রদের মারধরের পাশাপাশি কক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন সিনিয়ররা। এ ঘটনায় ৪৭তম ব্যাচের ওই কক্ষে প্রায় সব শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করে তেজগাঁওয়ের শমরিতা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিনিয়র-জুনিয়রদের পূর্বের কোন্দলের জেরে বৃহস্পতিবারের এ ঘটনা ঘটেছে। হলটির ৬০১নং কক্ষে বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাঁচজন শিক্ষার্থী থাকেন। তারা হলেন- ৪৭তম ব্যাচের জনি, সাকিব, শাফি, মাহি ও শাহেদ। এদিন সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও জিএমএজি ওসমানী হলের ৪৬তম ব্যাচের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ৪৭তম ব্যাচের ৬০১ নং কক্ষের ওই শিক্ষার্থীদের ‘গেস্টরুমে’ নেওয়ার জন্য আসেন।
এসময় তারা গেস্টরুমে যেতে অস্বীকৃতি জানালে সিনিয়রদের ৩০ জনের দলের ৭-৮ জন কক্ষের ভেতরে ঢুকে জুনিয়রদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ৪৬তম ব্যাচের রেদোয়ান, শাকিল, নিয়াজ, ইমন, রাইসুল, ইমরান ও আদনান জুনিয়রদের কক্ষে রেখেই মারধর শুরু করেন।
সিনিয়রদের মারধরে আহত এক জুনিয়র শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চলমান সেমিস্টার ফাইনালের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। রাত ১টার দিকে ৪৬তম ব্যাচের রেদয়ানুল হক দলবল নিয়ে আমাদের কক্ষের দরজায় এসে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তারা আমাদের রুমের সবাইকে গেস্টরুমে যাওয়ার জন্য কক্ষ থেকে বের হতে বলেন। কিন্তু আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা বলে গেস্টরুমে যেতে অস্বীকৃতি জানাই।
মারধরের শিকার এ শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যেতে না চাইলে শুরুতে তারা আমাদের গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে কক্ষের ভেতরে ঢুকে আমাদের মারধর শুরু করেন। তারা বিছানার লোহার স্ট্যান্ড খুলে আমাদের মারধর করেছে। আমাদের কক্ষের জনির বুকে ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার বুক থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কক্ষে থাকা চেয়ার দিয়েও তারা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে।
কক্ষে ঢুকে জুনিয়রদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র ব্যাচের রেদোয়ানুল হক বলেন, আগের দিন জুনিয়ররা আমার গায়ে হাত তুলেছে। এতে হলে যারা জুনিয়র আছে তারা সবাই আমার সাথে মজা নিয়েছে। আমরা তাদের রুমে গিয়েছিলাম সে বিষয়ে কথা বলতে। আমাদের সাথে ৪৬তম ব্যাচের সবাই ছিলেন।
রেদোয়ানুল হক বলেন, সিনিয়ররা তাদের ডাকলেও তারা সাড়া দিচ্ছিলো না। সাড়া না দিয়ে উল্টো জুনিয়র ব্যাচের শাহেদ ছুরি বের করে ভয় প্রদর্শনের চেষ্টা করে। তার ছুরি দেখে কক্ষে শোরগোল পড়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দেখে আমরা কক্ষে ঢুকতে গেলে আমাদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এসময় কাউকে টার্গেট করে মারধর করা হয়নি।
জুনিয়রদের হাতে পূর্বের মারধরের কথা উল্লেখ করে রেদোয়ানুল আরও বলেন, বৃহস্পতিবারের রাতের ঘটনায় আমাকে প্রধান আসামি বলা হচ্ছে। অথচ জুনিয়রের হাতে আমি মার খেয়েছি। মার খেয়ে চুপ থাকলে হয়তো এমন কিছু আর হতো না।
জুনিয়র ব্যাচের শাহেদের কাছে ছুরি প্রদর্শন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুরি দেখানোর বিষয়টি মিথ্যা। আমি কাউকে ছুরি দেখাইনি। তারা এই হামলার দায় এড়ানোর জন্য বা ঘটনাটি অন্যদিকে নেওয়ার জন্য এ অভিযোগ তুলেছেন। রুমে আমরা কেবল পাঁচজন ছিলাম। অথচ তারা সংঘবদ্ধভাবে আমাদের জোরপূর্বক গেস্টরুমে নেয়ার চেষ্টা করে। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা আমাদের পিটিয়েছে।
দুপক্ষের মারধরের এ ঘটনার বিবরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তিনি শুক্রবার সকালে হল পরিদর্শন করেছেন। জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।