মেয়াদোত্তীর্ণ ডিনের চেয়ারে নিজেই বসলেন বেরোবি ভিসি
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:০৫ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৭ PM
আইন অমান্য করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগটির শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষদে কর্মরত ১৯ জন শিক্ষক গত ৫ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এসব শিক্ষকের মধ্যে আট জনই সহযোগী অধ্যাপক।
জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে দুটি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলো- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ভূগোল এবং পরিবেশ বিজ্ঞান। এর আগে গত ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে উপাচার্য নিজেই এ ডিনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উপাচার্য নিশ্চয়ই কোনো দাবি দাওয়ার বিষয়, ডিপার্টমেন্টে বা ফ্যাকাল্টির কোনো সার্থের বিষয় আঁচ করেছেন। সেজন্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। -আলমগীর চৌধুরী, রেজিস্ট্রার
রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়েছে, অনুষদটিতে কর্মরত শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য ডিনের দায়িত্ব পালনে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
তবে অনুষদের শিক্ষকরা বলছেন, তাদের মাঝে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে কোন সংকট নেই। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষদটির দুইটি বিভাগে কর্মরত শিক্ষকরা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক নির্ধারিত তারিখ হতেই অনুষদীয় যোগ্য শিক্ষকগণের মধ্য হতে ডিন নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া অভিযোগে শিক্ষকরা জানান, এই অনুষদের কর্মরত শিক্ষকদের মাঝে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে কোনো দ্বিমত বা সংশয় নেই। এই অনুষদের বিভাগ দুটির মধ্যে কেউ অধ্যাপক পদে কর্মরত নেই। ইতোপূর্বে বিধি মোতাবেক এই অনুষদের বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও পড়ুন: রেজিস্ট্রার-প্রক্টরসহ পবিপ্রবির ৯ পদে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ এর ২৬ (৫) ধারায় অনুষদের ডিন নিয়োগের বিষয়ে বলা আছে, ভাইস-চ্যান্সেলর সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে প্রত্যেক অনুষদের জন্য উহার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য হইতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে দুই বৎসর মেয়াদের জন্য ডিন নিযুক্ত করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোন অনুষদে অধ্যাপক না থাকিলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগকৃত হইবেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে কোনো অধ্যাপক না থাকায় গত দুই মেয়াদে সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্য থেকে পালাক্রমে দুই জন ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার সে রীতি ভেঙে উপাচার্য নিজেই এই দায়িত্ব নিয়েছেন।
ভিসির এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. এমদাদুল হক বলেন, কোন প্রেক্ষাপটে আমাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সমস্যা এটা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে একটা আবেদনপত্র পাঠিয়েছি, আশা করছি এর দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ড. মোছা. সিফাত রুমানা বলেন, আমাদের জানা মতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কর্তৃপক্ষ এখন কোন জায়গায় মনে করেছে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে দ্বিমত আছে—এটা আসলে কর্তৃপক্ষ ভালো উত্তর দিতে পারবে।
আমাদের জানা মতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কর্তৃপক্ষ কোন জায়গায় মনে করেছে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে দ্বিমত আছে—এটা কর্তৃপক্ষ ভালো উত্তর দিতে পারবে। -মোছা. সিফাত রুমানা, বিভাগীয় প্রধান
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সাথে কথা বলার জন্য গত কয়েক দিনে একাধিকবার তার দপ্তরে গিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী জানান, উপাচার্য নিশ্চয়ই কোনো দাবি দাওয়ার বিষয়, ডিপার্টমেন্টে বা ফ্যাকাল্টির কোনো সার্থের বিষয় আঁচ করেছেন। সেজন্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগপত্র পেয়ে ভিসির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। বাকিটা তিনি দেখবেন।