আবাসন সুবিধা নেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ ভাগ শিক্ষার্থীর

গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  © টিডিসি ফটো

লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। প্রতিষ্ঠার এক যুগ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। কিন্তু সে অনুযায়ী আবাসন সুবিধা না বাড়ায় তীব্র সংকটে ভূগছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। নতুন ১টি হলের নির্মাণ এবং আরেকটি হলের সম্প্রসারণ কাজ চলছে একরকম কচ্পছ গতিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৮০ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি আবাসিক হলে (৩টি ছাত্র ও ১টি ছাত্রীদের) মাত্র ৬০৪ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যাবস্থা রয়েছে। ৬০৪টি সিটে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় নয়‘শ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর ৮৬ শতাংশই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছাত্র সংখ্যা ৪ হাজারেরও একটু বেশি; যাদের জন্য ৩টি হলে আবাসন ব্যাবস্থা রয়েছে মাত্র ৫০৫ জনের। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ২ হাজার ২৪৮ জন; যাদের জন্য একমাত্র আবাসিক হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীতে মাত্র ২০০টি সিট রয়েছে। যদিও থাকছেন ২৯৯ জন। ছাত্রদের হলে সিট পাওয়া গেলেও ছাত্রী হলে সিট পাওয়াকে ‘সোনার হরিণ’ বলেই মনে করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলে ফাইনাল ইয়ারে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও বেড শেয়ার করে থাকতে হচ্ছে।

তীব্র আবাসন সংকট থাকায় হলগুলোতে একরকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। ৪টি হলে মোট ৬টি গণরুম রয়েছে; যেখানে প্রতিরুমে ১৫-২০ জন করে থাকছেন। এতে করে প্রাত্যহিক কাজগুলোতে বিঘ্ন ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ। গণরুমের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘‘হলের গণরুমে একসাথে ১৫-২০ জন থাকায় রুমে পড়ালেখার পরিবেশ পাওয়া যায় না। তাছাড়া সময়মতো ঘুমানোও যায় না। এতে দৈনন্দিন কাজগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’’

এদিকে আবাসিক ছাত্র নয় অথচ হলে অনেক শিক্ষার্থীই অবস্থান করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি হলে ৯০৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসিকতা আছে মাত্র ৬৬৩ জনের। অর্থাৎ হলে অবস্থান করা ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীরই অনাবাসিক। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে হলে থাকছেন এসব শিক্ষার্থীরা। আবার আবাসিকতা আছে, এমন বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে রাজনৈতিক অন্তর্কোন্দলের কারণে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

জানা যায়, হল প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে হলে শিক্ষার্থী উঠানো-নামানো এসব তদারকি করছেন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর ছাত্র-ছাত্রীদের হলে থাকতে হয় রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করার বিনিময়ে।

এছাড়াও আবাসন সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে বা শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা, যাতয়াত ভোগান্তিসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি গুণতে হচ্ছে মেস কিংবা বাসা ভাড়া। ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব দেবনাথ বললেন, ‘‘শহরে থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়া আসা অনেক কষ্টের। তাছাড়া আমাদের পরিবহন সংকটের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়।’’

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারণ কাজ এবং নতুন একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ চললেও তা চলছে একেবারেই ধীরগতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ঘুরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের সম্প্রসারণ কাজ ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় শেষ হওয়ার কথা।  কিন্তু তা শেষ হতে আরো এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ ২০১৮ এর অক্টোবর এ শেষ হবার কথা থাকলেও শেষ করতে আরো বছরখানেক সময় লাগবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, “হলে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এখনো আবাসিকতা দেয়া হয়নি। তাই হলে অবস্থানকারী মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু অনাবাসিক শিক্ষার্থীও রয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো: আবু তাহের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুটি হলের নির্মাণ কাজ চলছে, তা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।” এছাড়াও ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য আলাদা দুটি হল নির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ