প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরে সরকারি তিতুমীর কলেজ
- মো. আমানউল্লাহ আলভী
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০২:৫৬ PM , আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৩:১৩ PM
৫৫ পেরিয়ে ৫৬ বছরে পদার্পণ করলো শিক্ষার্থীর সংখ্যায় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ। ১১ একর জুড়ে বিস্তৃত সবুজ ঘেরা এই ক্যাম্পাসের রয়েছে সুদীর্ঘ গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস।
বর্তমানে কলেজটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় ২২টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতোকত্তর শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। রয়েছে দুইশোর উপরে অভিজ্ঞ শিক্ষক। যারা বর্তমান গুণগত শিক্ষার চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
বর্তমানে কলেজটিতে রয়েছে চারটি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি মিলনায়তন, লাইব্রেরি, মসজিদ, মন্দির, ছাত্র সংসদ কক্ষ, নিজেস্ব জিমনেসিয়াম, মেয়েদের কমনরুম, শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র, ৩টি আবাসিক হল (আরও দুটি নির্মাণাধীন) ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৯টি বাস।
সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বর্তমানে কলেজটিতে রয়েছে ১৮ টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সময়টা ১৯৬২। ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মাঝামাঝি সময়। বিভিন্ন দাবি আদায়ে প্রায়ই গর্জে উঠছে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ। হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশন ছিলো ছাত্র সমাজের এই প্রতিবাদী ভাষা রোধ করতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন। তাই তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যায় এদেশের ছাত্রসমাজ। গর্জে উঠে পূর্ব পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডে গবেষণার সুযোগ পেলেন ঢাবির সাবেক ছাত্র আতাউল
ছাত্র আন্দোলনে ভীত হয়ে তখনই ছাত্রদের বিভক্ত করতে পরিকল্পনা করে পাকিস্তান সরকার। তারই ধারাবাহিকতা ১৯৬৮ সালে ৭ মে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রী শাখাকে আলাদা করে নিয়ে আসা হয় মহাখালীর ডিআইটি খাদ্য গুদামে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে নাম দেয়া হয় জিন্নাহ কলেজ।
শুরুতে জিন্নাহ কলেজ নামে শুরু করলেও ১৯৭১ এর উত্তাল মার্চের শুরুতেই এদেশের ছাত্রসমাজ মুছে ফেলে স্বৈরাচারী পাকিস্তানের স্মৃতি।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান রেডিও-টেলিভিশনে এক ভাষণে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্থগিত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের ছাত্রদের ন্যায়ে ফুঁসে উঠে জিন্নাহ কলেজের ছাত্ররাও। জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কতিপয় ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ্ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। তখন আনিসুজ্জামান খোকন (জিন্নাহ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক) জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ প্রস্তাব করেন।
২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হলে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের মধ্যস্থতায় জিন্নাহ্ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ওই রাতেই ‘তিতুমীর কলেজ’ নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয়। তখন এলাকার কিছু যুবকও তিতুমীর নামকরণের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
উত্তাল মার্চের শুরুতে তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের এই প্রতিবাদী ভূমিকা স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিলো আশপাশের মানুষদের।