সংঘাত-সংঘর্ষে অস্থিরতা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে  © ফাইল ছবি

ঠিক একই সময়ে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এছাড়া গেল কয় মাসে আরও একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস ধরে চলছে অস্থিরতা। নবীন ছাত্রীকে ছাত্রলীগের নির্যাতনের অভিযোগ দিয়ে শুরু হয় এই অস্থিরতা। এরপর উপাচার্যের অডিও ফাঁস, ছাত্রদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর পরিস্থিতির অবনতি হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ঘন ঘন সংঘর্ষের পর এবার প্রকাশ্যে এলো শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব। এর জেরে দুই দিনে প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।

আরও পড়ুন: তিনজনের দ্বন্দ্বে দুই শতাধিক হাসপাতালে, তিন মামলায় আসামি এগারোশো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় গেল রবিবার ও সোমবার সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। সোমবার সাভারে বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় আজ শুক্রবার পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের তিনটি আবাসিক হলে ঢুকে শনিবার রাতে ছাত্রীদের গালাগাল করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। এসব ঘটনায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বৈধ সিট চান গণরুমের শিক্ষার্থীরা, গভীর রাতে ভিসি ভবনের সামনে বিক্ষোভ

শিক্ষাবিদরা বলছেন, দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যদিও এটা খারাপ কিছু না, কিন্তু যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। এমন ব্যক্তিরা উপাচার্য হচ্ছেন যারা কোন হলের হাউজ টিউটর হিসেবেও কখনও দায়িত্ব পালন করেননি।

ফলে তাদের পক্ষে এসব সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। যেসব কারণে এখন অস্থিরতা হচ্ছে, একই কারণে আগেও সংকট হয়েছে। দেশে যদি গণতন্ত্রের সংকট হয় তাহলে এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ে বলে মত তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যেটা বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগে এমন সব ছাত্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তারা হয়ত এক সময় ছাত্রদল বা শিবির করতো। তাদের তাদের মূল সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিৎ।

আরও পড়ুন: চবির প্রশাসনিক পদ থেকে আরও তিনজনের পদত্যাগ

দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যরা কী তাহলে যোগ্য নন? জবাবে অধ্যাপক মান্নান বলেন, দলীয় বিবেচনা আমি খারাপভাবে দেখি না। যদি যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাতে তো কোন সমস্যা নেই। এমন সব উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা কখনও বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালনও করেননি। একটা হলের হাউজ টিউটর ছিলেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন কীভাবে?

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংঘাত বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুচ্ছ কারণে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেও রোধ করতে পারছে না। তবে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে দ্রুত সমাধান সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ