ফ্যাসিবাদের ছায়া কাটিয়ে এবারের ঈদে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে জনগণ
- সুলতান আহমেদ রাহী
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৫, ০১:৪৩ PM , আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:১৬ AM

আদি পিতা আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র কাবিল ও হাবিলের দেওয়া কুরবানি থেকেই কুরবানির সাথে পরিচিত আমরা। পরবর্তীকালে মক্কা নগরীর জনমানবহীন ‘মিনা’ প্রান্তরে ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) মহান আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তুলনাহীন ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তারই স্মৃতিচারণ হচ্ছে ‘ঈদুল আজহা'।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের ঈদুল আজহা নিশ্চয়ই বেশি আনন্দঘন হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক হয়রানি ও অন্যান্য কারণে সংকুচিত পরিবেশে ঈদ উদ্যাপন করতে হতো, এবার সবার সাথে প্রাণোচ্ছলভাবে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই।
বিগত সময়ে ক্যাম্পাসে আমাদের এক্সেস ছিল না বললেই চলে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ঈদ উদ্যাপন তো দূরের কথা। আমরা এই ঈদে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা পর সকল হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিয়েছি, সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। তাদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়সহ মৌসুমি ফল আম উপহার হিসাবে বিতরণ করেছি। আমাদের সৃজনশীল ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল খুবই জনপ্রিয় ও ভালোবাসা আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে অর্জন করতে পেরেছি।
বিগত সময়ে হলগুলো ছিল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি, মারধর, হয়রানি ও নির্যাতন করত। এবারের ঈদে যারা হলে অবস্থান করবে তাদের সাথে মোলাকাত হবে ইনশাআল্লাহ। যেহেতু সুযোগ হয়েছে সেহেতু হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের কোনো সমস্যা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের জানাতে পারে, আমাদের সাধ্যের মধ্যে সমাধানের পথে হাঁটব। বিগত ঈদে ব্যক্তি, দল ও দেশ ফ্যাসিস্টের অধীনে সংকটকালীন অবস্থায় থাকলেও এখন আলহামদুলিল্লাহ দেশবাসী অনেকটাই ভালো অবস্থায় ঈদ উদ্যাপন করবে।
ফ্যাসিস্ট আমলে কিছু কিছু ঈদেও পালিয়ে বেড়াতে হতো। গ্রেপ্তার এড়াতে কিছু ঈদ পরিবারের সাথে উদ্যাপন করতে পারিনি। সারাদেশ ফ্যাসিস্ট শাসনামলে কারারুদ্ধ ছিল, আমাদের নেতাকর্মীরা হয় কেউ জেলখানা নামক স্থানে বন্দি, না হয় খোলা আকাশের নিচে মুক্ত থাকার পরও একপ্রকার শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে ঈদ উদ্যাপন করা লাগত।
গত ঈদেই ২০২৪-এর ডামি নির্বাচনের ষড়যন্ত্রমূলক গাড়ি পুড়ানো মিথ্যা মামলার জামিন নিতে হাইকোর্টে অবস্থান করতে হয়েছিল। সারাদেশে নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মিথ্যা মামলার জন্য জামিনের সিরিয়াল পেতে গত ঈদুল আজহার পর সিরিয়াল হওয়ার কারণে ঘরছাড়া ফেরারি জীবন ছিল আমারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি পুড়ানো মিথ্যা মামলার অন্য নেতাকর্মীদের। এছাড়াও ২০১৮ সালের ঈদেও এমন খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা লাগছে।
ছোটবেলায় ঈদগুলোতে নিজের পছন্দ, সাধ ও ইচ্ছাপূরণে আনন্দ পেতাম। ঈদ মানেই তখন বিশেষ কিছু ছিল, আত্মীয়ের বাসায় যাওয়া-আসা, হৈ-হুল্লোড় করে কেটে যেত ঈদ। বর্তমানে জীবনের প্রবাহে দায়িত্ব ও সার্কেল পরিবর্তিত হয়েছে, রাজনীতিবিদদের সর্বজনীন ভাবনা ভাবতে হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া, অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু কন্ট্রিবিউশন করতে পারলে ভালো লাগা কাজ করে।
ঈদুল আজহার লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয়-নম্র আচরণ করা। মুসলমানদের জীবনে এই সুযোগ সৃষ্টি হয় বছরে মাত্র দুবার। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে পায়ে পা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাক‘আত সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যায়। এসব স্মৃতিগুলো খুবই আনন্দের।
দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে তারা যেন সাধ্যানুযায়ী সমাজের গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। ঈদুল আজহা মানেই প্রিয়তম বস্তু ত্যাগ করার মাহাত্ম্যকে বোঝায়। তারা যেন এই মাহাত্ম্যকে ধারণ করে নিজের বিলাসিতা পরিহার করে নিজেদের আশেপাশে থাকা মানুষগুলোর ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।
বর্তমানেও জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সারাদেশে বিভিন্ন খুন, চুরি-ডাকাতি অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন নৈরাজ্য শিরোনাম পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাজারের খাদ্যসামগ্রী দাম আকাশচুম্বী এমতাবস্থায় বিত্তবান মানুষ অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করলে মানুষগুলো ঈদ আনন্দময় হতো। এই প্রত্যাশা নিয়ে সকলকে জানাই পবিত্র ঈদুল আজহা শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।
লেখক: সুলতান আহমেদ রাহী, আহ্বায়ক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।