‘আপা! আপনার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নেই’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

‘‘আপা! আপনার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নেই। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা-অসুবিধায় একসাথে কাজ করছি, তাঁদেরকে দমন-নিপীড়ন ও বহিষ্কার করা হচ্ছে। তাঁদের হাত-পা ভেঙ্গে ও জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এবং ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করতেছে। আপনি যাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁদেরই একটি মহল।’’

বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সভাপতি রাফিউল আলম দীপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুতি জানিয়ে এসব কথা বলেন।

দীপ্ত আরও বলেন, আপনারা সবাই দেখেছেন, কীভাবে দিনে দুপুরে বহিরাগত এবং সাবেক ছাত্রদল নেতাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষর্থীদের মারধর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগত এবং অছাত্রদের অস্ত্রসহ প্রবেশের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্বিকার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়মিত ঘটতে থাকা এসকল ঘটনায় দোষীদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতার উপর প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতার; অছাত্র এবং বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা; আহত শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ এবং মো. সালমান চৌধুরীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার; সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান পূর্বক নিরাপদ ক্যাম্পাস সুনিশ্চিত এবং হামলায় ইন্ধনদাতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণসহ মোট পাঁচ দফা দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রতিকী প্রতিবাদ মিছিল; আগামী ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে অছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসীমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে এবং অন্য সকল দাবি পূরণের জন্যে মানববন্ধনসহ উপাচাযর্কে স্মারকলিপি প্রদান; আগামী ১৩ মার্চ সোমবার বিক্ষোভ মিছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উল্লেখিত দাবি আদায় পর্যন্ত নিয়মিত কর্মসূচী রয়েছে। তাদের দাবি আদায় না হলে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

আরও পড়ুন: নিজ নেতাদের ছাত্রদল দিয়ে পেটাল কুবি ছাত্রলীগ

এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টায় রেজা-ইএলাহী সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা প্রদান করেন। পরে এক সহকারী প্রক্টরের সাথে বাক-বিতণ্ডা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর জেরে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলাবিধি না থাকার সত্ত্বেও ‘উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী’ গত ৭ মার্চ এনায়েত উল্লাহ এবং সালাম চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।

বহিষ্কাররের পরদিনই ৮ মার্চ দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিসমিল্লাহ কনফেকশনারীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭ সালে শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রনি হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত আসামী বিপ্লব চন্দ্র দাস, সাবেক শিক্ষার্থী ইকবালসহ ১২-১৫ জনের হামলায় গুরুতর আহত হন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান হৃদয়, বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহান।

বহিষ্কাররের পরদিনই এ মারধর পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার যোগসাজেশ রয়েছে বলে দাবি করে তারা তার (প্রক্টর) পদত্যাগ দাবি করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবীর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী অপকর্ম করে পার পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর গতকালের হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তবে এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমি গতকাল রাতের মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছিলাম, চেষ্টা অব্যাহত আছে। অতি শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ