নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
জয়ের জন্য বিএনপি শিবিরের দিকে তাকিয়ে আওয়ামীপন্থীরা
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৮ AM , আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৭ AM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। মাঝে একাধিকবার এই শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিলেও নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। তবে ২০২৩ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে এবার সম্পূর্ণরূপে দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। আর এর জেরে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ভোট।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ১৫ পদে ৩২ জন শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় রিয়াদ-জান্নাত এবং তপন-শুভ্র নামে দুটো পূর্ণ প্যানেল তৈরি হয়েছে। এদের মধ্যে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার ও ড. রিয়াদ হাসান। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস।
আরো পড়ুন: ইডেন কলেজে আবারও ছাত্রী নির্যাতন ছাত্রলীগ নেত্রীর
এছাড়া, এই দুই প্যানেলের বাইরে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন ফোকলোর বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান বাকী বিল্লাহ (সাকার মুস্তাফা) এবং প্রণব কুমার মন্ডল। তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।
একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি হলেও বিভক্তির কারণে কোনো প্যানেলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আবার বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ভোটের সংখ্যা কম হলেও একসঙ্গে একদিকে গেলে তার প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। এসকল কারণে এবারের নির্বাচনে সাদা দল অংশগ্রহণ না করলেও তাদের ভোট ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু-নীল দল পূর্বে দুটি দলে বিভক্ত ছিলো। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ ও নীল দল দুই নামে পরিচিত ছিলো। যেখানে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম অনুসারী এবং অন্য অংশকে মোহিত উল আলম বিরোধী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো। সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় এর পরেরবার দুটি সংগঠন মিলে বঙ্গবন্ধু-নীল দল নাম দিয়ে একসাথে চললেও বছরের ব্যবধানে সেই ঐক্য আবারো কাগজে কলমের ঐক্যেই রূপ নেয়।
আরো পড়ুন: অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে সর্বস্ব হারালো ঢাবি শিক্ষার্থী
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে কেনো জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু নীল দলের সভাপতি ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, কোন্দলের কিছু নেই। শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ছে আর সাদা দল যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, তাই যাদের ইচ্ছে হচ্ছে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম আল মামুন বলছেন, মানসিক দূরত্বের কারণেই একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করছেন। সংকট রয়েছে সেটি অস্বীকার করছিনা তবে সৌন্দর্যও আছে এতে।
বিভক্তির প্রশ্নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাকার মুস্তাফা বলেন, দলের ইজমের এই অবস্থার জন্যে সিনিয়র নেতৃত্ব দায়ী। তাদের ব্যর্থতায় আজকে এতো ভাগে ভাগ হতে হয়েছে। যেহেতু দলের প্যানেল নেই তাই আমি সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছি। দলের পরিচয়ে হলে আমি দাঁড়াতাম না। সাদা দলের ভোটকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন এই প্রার্থী।
আরো পড়ুন: র্যাগিংয়ের দায়ে শাবিপ্রবির ৫ শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার
এদিকে এবারের নির্বাচনে সাদা দলের ভোটের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় ইজমও। জানা গেছে, অনেক আওয়ামীপন্থী শিক্ষকই যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় ব্যবহার করে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং দলীয় পরিচয়ের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গ্রুপ গড়ে তুলছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষক জানান, শিক্ষকরা এখানে ৩ ভাগে বিভক্ত। একদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় নিয়ে, একদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে।
এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারিকুল ইসলাম ও মাসুদ রানা অন্য অংশে শফিকুল ইসলাম। একাধিক শিক্ষক দাবি করেছেন এই তিনজনের কোন্দলের কারণেই আজ দলটা বিভক্ত। তবে নিজেদের নেপথ্যের নেতা মানতে নারাজ আলোচনায় আসা এই ৩ শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় ইজমের বিবেচনায় এই নির্বাচনে সব থেকে আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে আসা শিক্ষকরা। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে সাদা দলের পাশাপাশি তাদের ভোটের উপরও তাকিয়ে থাকতে হবে। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, গ্রুপ বা দলের পরিচয় থেকে সরে এসে নিজের পড়াশোনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। তবে এ নিয়ে কোন অংশই বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
আরো পড়ুন: ইবির ফুলপরীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগের অভিযুক্তরা
উল্লেখ্য, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সর্বশেষ বিএনপিপন্থী সাদা দল অংশ নেয় ২০১৭ সালে। এরপর এককভাবেই আওয়ামীপন্থী দাবী করা শিক্ষকরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নির্বাচন আসলে ছোট ছোট গ্রুপগুলোকে সম্পৃক্ত করে ভোটে যায় বড় দুই অংশ।
সাদা দলের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে দলটির সদস্য ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা বলেন, বিএনপি অনেকদিন ক্ষমতার বাইরে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জনমত অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও ভাটা পড়েছে। ভোটের সংখ্যাতেও তো বাড়ছে না। তাই এই অবস্থায় নির্বাচন করে লাভ নেই আমাদের। তাই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না।
এসময় তিনি আরো জানান, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও ভোট প্রদান করবেন সাদা দলের সদস্যরা। তবে এই ভোট কোনো একক প্যানেলকে নয় বরং ব্যক্তি দেখে ভোট দেবেন তারা। এছাড়া, সাদা দলের ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ হিসেবে নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টিও উল্লেখ করেন এই শিক্ষক।