সাত কলেজ

‘স্ক্রিন সমাবর্তন’ শিক্ষার্থীদের কাছে মরীচিকা, পান্তাভাত কিংবা যাত্রাপালার মতো

সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ তিন বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামী নভেম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩৪টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ১২৭টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভেন্যুতেই অংশ নেবেন। অপরদিকে অধিভুক্ত বাকি সরকারি সাতটি কলেজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা জায়ান্ট স্কিন অর্থাৎ পর্দার মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ থেকে যুক্ত হয়ে সমাবর্তনে অংশ নেবেন।

এমন সিদ্ধান্তে অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘স্ক্রিন সমাবর্তন’ এক প্রকার যাত্রাপালার মতো। কারো কারো কাছে এটি মরীচিকার মতো আবার কারো কারো কাছে পান্তাভাতের মতো। তারা এ ধরনের সমাবর্তন প্রয়োজনে বয়কটের হুশিয়ারি করেছেন।

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম অংশগ্রহণ করেন। সেখানে ছেলেদের জন্য ঢাকা কলেজ এবং মেয়েদের জন্যে ইডেন কলেজকে ভেন্যু হিসেবে নির্ধারণ করে ডিজিটাল ডিসপ্লে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। সে বছরও বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: ঢাবির সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্সে’ নয়, আলাদা সমাবর্তন চায় সাত কলেজ

এরপর গত ০৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় ৫৩তম সমাবর্তনের সিদ্ধান্ত ‍গৃহীত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৯ নভেম্বর (শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোবেল বিজয়ী ফরাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল।

নতুন সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই ফের অধিভুক্ত সাত কলেজ সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপে ফের নতুন করে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী নেহা তানজুম বলেন, এ ধরনের প্রহসনমূলক সমাবর্তনকে বয়কট করা উচিত। এসব প্রহসন বাদ দিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যে আলাদাভাবে সমাবর্তনের আয়োজন করতে হবে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্নাতক শিক্ষাবর্ষ ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষাবর্ষ ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এ সমাবর্তনে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন: ‘স্ক্রিন সমাবর্তনে’ অপমানবোধ করছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ইকবাল আজিজ বলেন, প্রজেক্টরের মাধ্যমে সমাবর্তন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। হয় সশরীরে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক অথবা নিজ নিজ কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের বিদায় দেয়া হোক।

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, এটা স্পষ্ট বৈষম্য, স্ক্রিন সমাবর্তন কেন হবে? ভিন্ন ভেন্যুতে ভিন্ন দিনে সাত কলেজের সকল কলেজকে একসাথে দেওয়াটা আমাদের সকলের দাবি। এ নিয়ে আমরা অধ্যক্ষের সাথে কথা বললেও তিনি এর সুস্পষ্ট সমাধান দিতে পারেননি। আশা করি ছোটরা এই বৈষম্যমুলক সমাবর্তনের প্রতিবাদ করবে এবং কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বুঝাতে সক্ষম হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ডিজিটাল সমাবর্তনের বিষয়ে বলেন, ’অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রতিটি কলেজই বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত হওয়ায় এক জায়গায় একই সময়ে এত শিক্ষার্থীদের সমাগম নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই ৫২তম সমাবর্তনের মতো এবারও ছেলে এবং মেয়েদের জন্যে আলাদা দু’টি ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে।’

অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য আলাদা সমাবর্তনের ব্যবস্থা করা যায় কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আলাদা করে সমাবর্তন করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং সমাবর্তনের জন্য প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির। যেহেতু সাতটি কলেজই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তাই এদের আলাদা করে সমাবর্তনেরও কোন সুযোগ নেই।’’


সর্বশেষ সংবাদ