অনার্স থেকেই শুরু হোক বিসিএস প্রস্তুতি, কীভাবে নেবেন?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১১:১৫ AM , আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ০৮:১৩ AM
লাখো প্রতিযোগীকে পিছু হটিয়ে নিজেদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে থাকেন বিসিএস ক্যাডাররা। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই করেন টিকে থাকার জন্য। বলা হচ্ছে, বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরি বিসিএস ক্যাডারশিপ। দেশ সেবার সুযোগ, সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে নেওয়া আর আর্থিক নিরাপত্তার কারণে বিসিএস এখন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, তাদের পরিবারগুলোরও প্রথম পছন্দ। প্রতি বছর লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী এই পরীক্ষায় অংশ নিলেও সফলতা পায় মাত্র কয়েক হাজার। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করলে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। চলুন দেখে নিই কীভাবে অনার্স জীবন থেকেই শুরু করবেন বিসিএসের প্রস্তুতি।
বিসিএস নিয়ে প্রাথমিক ধারনা
বিসিএসের পূর্ণরূপ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। এটা এমন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা যার মাধ্যমে প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, কর বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিসিএস ক্যাডার মূলত দুই ধরনের। এক. জেনারেল; দুই. টেকনিক্যাল। জেনারেল ক্যাডারে যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে অংশ নেওয়া যায়, আর টেকনিক্যাল ক্যাডারে নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি থাকা আবশ্যক।
পরীক্ষার ধাপ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: ২০০ নম্বরের এমসিকিউভিত্তিক পরীক্ষা। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান, গণিত, যুক্তি, আইসিটি, ভূগোলসহ মোট ১০টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন আসে। প্রতি ভুল উত্তরে ০.৫০ নম্বর কাটা হয়।
লিখিত পরীক্ষা: প্রিলিতে উত্তীর্ণদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ছাড়াও যুক্তি, বিজ্ঞান এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে।
মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের ভাইভা দিতে হয়। লিখিত ও মৌখিক মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তদের মধ্যে ক্যাডার নির্বাচন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই প্রস্তুতির ছক
লক্ষ্য নির্ধারণ হোক শুরুতেই: বিসিএস ক্যাডার হবেন কেন? নিজেকে এই প্রশ্ন করুন। শুধু হুজুগে নয়, একেবারে পরিষ্কার উদ্দেশ্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করুন।
সিলেবাস ও প্রশ্ন কাঠামো জানুন: বিগত বছরের প্রশ্নপত্র ঘেঁটে সিলেবাস বুঝে নিন। কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পায় তা বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি শুরু করুন।
বেসিক তৈরি করুন শক্তভাবে: ইংরেজি গ্রামার, অংক, সাধারণ জ্ঞান—এই সবকিছুর ভিত্তি তৈরি হয় স্কুল ও কলেজ থেকে। তাই দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে এখনই কাজ শুরু করুন।
লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন: লিখিত পরীক্ষায় সফলতার জন্য পরিষ্কার ও প্রাঞ্জলভাবে লিখতে শিখুন। প্রতিদিন ১–২ পৃষ্ঠা ফ্রিহ্যান্ড লেখার অভ্যাস করুন।
ভাষা দক্ষতা বাড়ান
বাংলা ও ইংরেজি—দুই ভাষাতেই দক্ষতা জরুরি। পত্রিকা, বই, ম্যাগাজিন পড়ুন; অনুবাদ অনুশীলন করুন। ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করুন, যা ভাইভার সময় কাজে দেবে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও আপডেট থাকা জরুরি
বিসিএস পরীক্ষায় দেশ ও বিশ্ব সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানা জরুরি। তাই নিয়মিত সংবাদপত্র ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন পড়ুন। টেলিভিশন টকশো, পডকাস্ট, ইউটিউব চ্যানেল থেকেও জানতে পারেন চলমান ঘটনা।
একাডেমিক ফলাফলকে গুরুত্ব দিন
অনেকে বিসিএসের পেছনে ছুটতে গিয়ে একাডেমিক পড়াশোনায় গাফিলতি করেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। ভাইভাতে অনেক সময় আপনার সাবজেক্ট থেকেই প্রশ্ন করা হয়। ভালো রেজাল্ট আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।
ক্লাসরুমের বাইরের অভিজ্ঞতা
ডিবেটিং ক্লাব, থিয়েটার, রিডিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, রেডক্রস—এই ধরনের এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে অংশ নিন। নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান ও যোগাযোগ দক্ষতা এখানে তৈরি হয়, যা ভাইভা বা চাকরি জীবনে বড় ভূমিকা রাখে।
তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ: প্রস্তুতির সময়
তৃতীয় বর্ষে উঠে পড়া শুরু করুন কিছু মৌলিক বই, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান/সাহিত্যভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। চতুর্থ বর্ষেই প্রিলিমিনারি গাইড বই দিয়ে রুটিন করে প্রস্তুতি শুরু করুন। লিখিত পরীক্ষার জন্যও কমন টপিকগুলো পড়তে থাকুন।
স্টাডি স্মার্ট, নট হার্ড
প্রচুর বই পড়ে মাথা ঘামানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিকল্পনা করে, প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে স্মার্টলি প্রস্তুতি নেওয়া। প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন, যাতে সময় ও শক্তি দুটোই সাশ্রয় হয়।
কোচিং ছাড়া প্রস্তুতি সম্ভব
যদি সঠিক গাইডলাইন থাকে, তবে ঘরে বসেও বিসিএস প্রস্তুতি সম্ভব। এখন অনলাইনে অনেক ভালো কোর্স পাওয়া যায় যা আপনাকে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। একই সাথে আপনার একাডেমিক পড়াশোনাকেও গুরুত্ব দিন।
নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস
দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস একজন ব্যক্তিকে কেবল চাকরির প্রস্তুতিতে এগিয়ে রাখে না, বরং তাকে করে তোলে আরও সচেতন, স্মার্ট ও তথ্যবহুল। একজন শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়া নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আগে থেকে এই অভ্যাস গড়ে না ওঠে, তাহলে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই এই চর্চা শুরু করা উচিত। আনন্দ নিয়ে ও আগ্রহ সহকারে পত্রিকা পড়তে হবে। প্রতিদিন অন্তত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি ইত্যাদি পাতাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে তা চাকরি পরীক্ষাসহ সামগ্রিক জ্ঞান বৃদ্ধি ও বিশ্লেষণক্ষমতা গঠনে দারুণ সহায়ক হবে। পড়ার সময় কৌতূহলী মনোভাব রাখতে হবে এবং বিভিন্ন মতামতের সঙ্গে নিজের মত মিলিয়ে দেখতে হবে। এই অভ্যাস বিসিএসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পর্যায়ে ভালো ফল করতে সাহায্য করবে।
টিউশনির মাধ্যমে প্রস্তুতি ও আয়
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজেদের খরচ মেটান। তবে টিউশনি শুধু অর্থ উপার্জনের উপায় নয়, বরং এটি একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানের গভীরতা ও চাকরির প্রস্তুতির জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি—এই বিষয়গুলো পড়াতে পারলে ওই বিষয়ে নিজের প্রস্তুতিও হয়ে যায়। কারণ, কাউকে কিছু শেখাতে হলে নিজেকেই আগে ভালোভাবে বুঝতে হয়। এইভাবে ধারাবাহিকভাবে পড়াতে থাকলে বিষয়গুলোর ওপর একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি হয়, যা বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় কাজে লাগে। তবে টিউশনি করতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ নেয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত টিউশনি পড়ালে ব্যক্তিগত উন্নয়ন, পড়াশোনা এবং বিশ্রামের সময় ব্যাহত হতে পারে। সবকিছুরই একটি ভারসাম্য থাকা জরুরি।
বিসিএস একটি প্রতিযোগিতামূলক কিন্তু সম্ভাব্য পরীক্ষাই মাত্র। ধৈর্য, পরিশ্রম, পরিকল্পনা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি সফল হবেনই। সব সময় নিজের লক্ষ্য মনে রাখুন, নিয়মিত অনুশীলন করুন এবং কখনো হতাশ হবেন না। [সম্পাদিত]