করারোপের প্রস্তাব ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থি: বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির লোগো
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির লোগো  © ফাইল ফটো

ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হওয়ায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান করযোগ্য নয় এমন যুক্তিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভূত আয়ে আয়কর আরোপের প্রস্তাবকে ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। 

আজ শুক্রবার বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন সংবাদমাধ্যম একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে এই করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা খাতকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সরকার এ খাতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার সকল স্তরে বিপুল অংকের ভর্তুকি ও অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জাতীয় বাজেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এবং এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র খরচে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ কিম্বা অনুদান না পাওয়ায় কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর নির্ভর করতে হয়। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সরকার যেখানে মেধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বস্তরের শিক্ষা খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে থাকে সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপর করারোপ করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার তথা শিক্ষিত জাতি গঠনে লক্ষ্যে দেশের শিক্ষানুরাগী- উদ্যোক্তা ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থলগ্নির মাধ্যমে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে দেশে ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী একসাথে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের প্রবণতা হ্রাসের পাশাপাশি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও মেধা পাচার রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জন্য বাংলাদেশে আসছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী তৈরিসহ বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান করোনা দূর্যোগকালীন সময়ে অর্থ সঙ্কটে পতিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ক্যাম্পাস ভাড়া প্রদান করা অনেক ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একমাত্র অর্থ প্রাপ্তির উৎস হিসেবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিস নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা সময়মত না হওয়ায় শিক্ষার্থী সংকটও দেখা দিয়েছে। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও টিউশন ফিতে ছাড় দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এমন সংকটকালীন সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপ করা হলে অনুমোদিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ না করে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রার্থিত প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে সরকার সহায়তার হাত প্রসারিত করবেন বলে আশা করি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ট্রাস্ট্রের অধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ট্যাক্স-ভ্যাট প্রযোজ্য নয় বিধায় ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপ করা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা রহিত করা হয়। ২০১০ সালে এসআরও-এর মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর ধার্য করা হলে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে করারোপের বিষয়টি স্থগিত করা হয়।

সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্ট্রের অধীন পরিচালিত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সঙ্কটে পড়বে, সেইসাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে এবং শিক্ষিত জাতি গঠনের মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রুপকল্প ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্য ব্যাহত হবে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনের মানসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান তথা বিপুল সংখ্যক কর্মচারী-কর্মকর্তা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব রক্ষার বিবেচনায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কোনো প্রকার কর আরোপ না করার জোর সুপারিশ করছি এবং করোনা দুর্যোগের এই সঙ্কটাপন্ন সময়ে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারিভাবে অনুদান-প্রণোদনা প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ