আ’লীগ উপদেষ্টার দুর্নীতি ঢাকতে স্বামীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি চেয়ারম্যান শামা ওবায়েদ

শামা ওবায়েদ ইসলাম ও মোস্তাফিজুর শোভন ইসলাম
শামা ওবায়েদ ইসলাম ও মোস্তাফিজুর শোভন ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহী শহরে অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এনবিআইইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম এবং কো-চেয়ারম্যান হিসেবে তার স্বামী মোস্তাফিজুর শোভন ইসলাম নিয়োগ পেয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই নিয়োগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক ড. খালেকের বিরুদ্ধে। তিনি ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এবং পরবর্তী মেয়াদে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তা স্ত্রী রাশেদা খালেক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান, কন্যা ফারজানা নিক্কন কো-চেয়ারম্যান এবং অন্য কন্যা ফারহানা শাওন ও ফারাহ দীনা গুঞ্জুন, ছেলে ফয়সাল খালিদ এবং ভাইয়ের পুত্রবধূ বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ ইসলাম ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।

অধ্যাপক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছে ইউজিসিকে ভুল তথ্য দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত বাসভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস দেখিয়ে প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া গ্রহণ, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের অর্থ কাউকে না জানিয়ে তুলে নেওয়া, উপাচার্যের জন্য কেনা গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং উপদেষ্টা হয়েও উপাচার্যের সম্মানী ভাতা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়ে নিজের বাসায় ব্যক্তিগত কাজ করানো।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনছার উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-কে বলেন, অধ্যাপক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি এবং বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। তবে তার পরিবারের সদস্যরা এখনো ট্রাস্টি বোর্ডে রয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেতে বড় অঙ্কের অর্থ লাগে, সে কারণেই তারা এই বোর্ডে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ আজিবর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ২০২২ সালে অধ্যাপক খালেকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালের ১১ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ড. বিধান চন্দ্র দাসকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে, সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক আনছার উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক খালেকের পরিবারের দুর্নীতির বিষয়গুলো যেন সামনে না আসে, সেই কারণেই তার ভাইয়ের পুত্রবধূ বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ ইসলাম ও তার স্বামী শোভন ইসলামকে ট্রাস্টি বোর্ডের শীর্ষ পদে বসানো হয়—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে অধ্যাপক খালেক ও শামা ওবায়েদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড চালালে অতীতের দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া থমকে যাবে এবং তা ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও ভয়াবহ অনিয়মের পথ তৈরি করবে। তারা আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের পরিণতি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে আরও অনিয়মে নিমজ্জিত করবে


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!