বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিলের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ০৬:৪৫ PM , আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫, ০৫:২০ PM
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পুনরায় ১৫ শতাংশ কর (ভ্যাট) আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের আয়োজনে আজ বুধবার (১৮ জুন) বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের সংগঠক লিয়াকত আলী লিটনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কাসফীরুল কাব্য, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের সংগঠক ও রবীন্দ্রন শ্রীজন কলার শিক্ষার্থী তারমিন আহমেদ তিশা, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সংগঠক ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক আব্দুল্লাহ আল নিশাত, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এলায়েন্স পুপ্সার সংগঠক ফাত্তা সিয়াম, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদ আব্দুল্লাহ জাবির,বিপ্লবী ছাত্র যুব অ্যান্দোলনের সংগঠক রেদোয়ান আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক নাবিন আবতাহি সহ আরো অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাইকোর্টের আপিল বিভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিট বাতিল করেছে। এর আগে সরকার একাধিকবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে তা শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। শেষে হাইকোর্টের আদেশে তা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু হাইকোর্টের আপিল বিভাগ সর্বশেষ কর আরোপের সিদ্ধান্ত বহালের যে রায় দিয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বক্তারা বলেন, এ রায় সরাসরি শিক্ষার অধিকার এবং ছাত্রস্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। এটি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে আরো ত্বরান্বিত করবে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা এই রায় তার পরিপন্থী। এর মধ্য দিয়ে সরকার শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলের ছাত্রস্বার্থবিরোধী একটি সিদ্ধান্তকে অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে– ছাত্রসমাজ এটা কিছুতেই মেনে নেবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে, এসব প্রতিষ্ঠান অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের কথা বলে গড়ে তোলা হয়েছে। তাহলে সেখানে কর আরোপের সিদ্ধান্ত আসে কীভাবে?
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, যে ১৫ শতাংশ কর আদায় করা হবে এর প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের উপর পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই করের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। ফলে শিক্ষার খরচ আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পাবে। এমনিতেই পর্যাপ্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়তে বাধ্য হয়। নতুনভাবে কর আরোপ করলে মধ্যবিত্ত -নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে আরও বেশি বঞ্চিত হবে।
বক্তারা বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক এবং মানবিক অধিকার। যখন এর উপর কর আরোপ করা হয়, তখন এটা নিশ্চিত হয় সরকার মানুষকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। শিক্ষাকে আর দশটা বাণিজ্যিক পণ্যের মতই গণ্য করে। অবিলম্বে ১৫ % শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান করেন, তা না হলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন। পাশাপাশি সরকারের নিকট চারদফা দাবি তুলে ধরেন।
চারদফা দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে। শিক্ষার উপর কোন কর আরোপ করা চলবে না; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কীভাবে মুনাফা করে তার তদন্ত করতে হবে। এই অবৈধ আয় বাজেয়াপ্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমাতে হবে; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নির্ধারণে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, শিক্ষাবীদ-বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে এই নীতিমালা করতে হবে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এবং উচ্চশিক্ষার শর্ত পূরণে ইউজিসি ও সরকারের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।