স্থায়ী বহিষ্কার ‘স্থায়ী নয়’, শাস্তি প্রত্যাহারের ব্যবস্থাও রেখেছে ইউআইইউ

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি  © সংগৃহীত

রাজধানীর অন্যতম বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)-তে চলমান ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। উপাচার্য ও একজন বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৪১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাসপেক্টেড এক্সপেল (ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বহিষ্কার হবে) এবং ১ জনকে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে শিক্ষার্থীরা লিখিত এই আদেশ হাতে পান। 

তবে ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ শব্দটি যে পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়, তা স্পষ্ট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শাস্তির আদেশপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে—শিক্ষার্থীরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন করে এবং ভবিষ্যতে শৃঙ্খলাবিধি অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি মওকুফের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ইউআইইউ বরাবরই শিক্ষার্থীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই চায় না, একজন শিক্ষার্থীর ‘একাডেমিক লাইফ’ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীদের দেওয়া চিঠিতে তাদেরকে আপিল করার সুযোগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন সন্তোষজনক হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা পুনর্বিবেচনা করবে। এ সময় তিনি জানান, বহিষ্কার তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ইতোমধ্যেই ৫-৭ জন শিক্ষার্থী আপিল করেছেন।

আদেশ বলা হয়েছে, ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত করে শৃঙ্খলা কমিটি মনে করেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। প্রাপ্ত সব প্রমাণ এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বিধির আওতায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদেরকে ২০২৫ সালের টার্ম থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ আপিল করতে চাইলে চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল রাতে ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কয়েকজন শিক্ষককে তাদের অফিস রুমে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করে তদন্ত চালায় প্রশাসন। পরে ১ জুন অনুষ্ঠিত সভায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর আগে, গত ১৮ মে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠি প্রকাশ করে ইউআইইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। সেখানে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছিল, যেসব শিক্ষার্থী ২৬ এপ্রিলের ঘটনায় দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে বহিষ্কারও করা হতে পারে। তবে যারা স্বেচ্ছায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়বেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না।

বহিষ্কার প্রত্যাহার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ইউজিসি’র
এদিকে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও শোকজ নোটিশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বুধবার (৪ জুন) ইউজিসির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ওই ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছাত্র-ছাত্রীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ